
পারভেজ হাসান লাখাই (হবিগঞ্জ) প্রতিনিধি:
হবিগঞ্জ জেলার লাখাই উপজেলার করাব গ্রামের মৃত নিতেন্দ দাশের মেট্রিক পাশ ছেলে মনমোহন দাশ—এক নামে পরিচিত এক সংগ্রামী নাম। দীর্ঘ ২৯ বছরেরও বেশি সময় ধরে তিনি প্রতিদিন হবিগঞ্জ জেলাশহর থেকে পত্রিকা নিয়ে এসে লাখাই উপজেলার মানুষের হাতে সংবাদপত্র পৌঁছে দিচ্ছেন। তিনি লাখাইয়ে সংবাদ প্রবাহের এক জীবন্ত কিংবদন্তী।
মনমোহন দাশের সংগ্রাম শুরু হয়েছিল ১৯৯৬ সালে। তখন তিনি প্রতিদিন ১৬-১৭ কিলোমিটার দূর হবিগঞ্জ জেলাশহরে যেতেন এবং বাইসাইকেলে করে পত্রিকা নিয়ে আসতেন। যদিও ২০২১ সাল থেকে তিনি বাইসাইকেল চালানো বন্ধ করে এখন বিভিন্ন পরিবহনের মাধ্যমে পত্রিকা সংগ্রহ করেন, কিন্তু তাঁর নিষ্ঠা আজও অক্ষুণ্ন। বিশেষ কোনো কারণ ছাড়া তিনি কখনোই কর্মবিরতি দেননি; কারণ তিনি জানেন, তিনি না গেলে লাখাইয়ে পত্রিকা পৌঁছাবে না।
### হকারির আড়ালে এক সফল পিতা
পত্রিকা বিক্রি করে সামান্য আয় করলেও, মনমোহন দাশ তাঁর দুই সন্তানকে শিক্ষিত ও সমাজে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। তাঁর বড় ছেলে বর্তমানে বাংলাদেশ পুলিশে কর্মরত এবং ছোট ছেলে বিএ অনার্স শেষ করে একটি এনজিওতে সম্মানজনক চাকরি করছেন। এই সাফল্য মনমোহন দাশের পেশার প্রতি গভীর নিষ্ঠা ও ত্যাগের ফল।
### পেশার প্রতি অনুরাগ ও অর্থনৈতিক সংকট
মনমোহন দাশ বর্তমানেও এই পেশায় নিয়োজিত আছেন শুধুমাত্র এই কারণে যে, এই কাজ তাঁর “রক্তের সাথে মিশে গেছে”। তিনি স্বীকার করেন, বর্তমানে পত্রিকা বিক্রি করে কোনো লাভ হয় না, মাঝে মাঝে দুই-তিনশ টাকা রোজ হয়, যা দিয়ে সংসার চালানো সম্ভব নয়। এখন তাঁর সন্তানেরাই সংসারের হাল ধরেছেন।
মনমোহন দাশ আফসোস করে বলেন, যখন তিনি হকারি শুরু করেছিলেন, তখন তাঁর যোগ্যতা অনুযায়ী তিনি একজন ভালো সাংবাদিক হতে পারতেন। অথচ বর্তমানে সাংবাদিকতার পেশায় আন্ডার-মেট্রিক লোকের অভাব নেই।
### সম্মানের অভাব ও ভবিষ্যতের উদ্বেগ
একজন নিরহংকার ও সদালাপী মানুষ হিসেবে মনমোহন দাশ লাখাই উপজেলার সকল অফিস, দপ্তর ও সাধারণ মানুষের কাছে সুপরিচিত মুখ। সকল পেশাজীবীর ছুটি বা ক্লান্তি থাকলেও পত্রিকা হকারদের নেই কোনো ছুটি বা বিশ্রাম।
মনমোহন দাশ উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, “যে পত্রিকার মাধ্যমে শিল্পপতি, গুণীজন এবং দেশ-বিদেশের খবর মানুষের কাছে পৌঁছায়, সেই পত্রিকার বাহক অর্থাৎ হকারদের যদি পত্রিকা অফিসগুলো যথাযথ আর্থিক মূল্যায়ন না করে, তবে ভবিষ্যতে এই ক্লান্তিহীন ও গুরুত্বপূর্ণ পেশায় কোনো নতুন প্রজন্মকে আর খুঁজে পাওয়া যাবে না।”
এই নিরলস কর্মীটির প্রতি যথাযথ আর্থিক সম্মান ও স্বীকৃতি জানানো এখন সময়ের দাবি।
বাংলার খবর ডেস্ক : 

























