
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে নববর্ষের বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার অন্যতম প্রধান আকর্ষণ ‘স্বৈরাচারের প্রতিকৃতি’ নতুন করে নির্মাণের কাজ পুরোদমে চলছে। সম্প্রতি প্রতিকৃতিটি আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হলেও থেমে থাকেননি চারুকলার শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। তারা দৃঢ় প্রত্যয়ে ফের গড়ে তুলছেন এই প্রতীকী শিল্পকর্ম।
গতকাল শনিবার রাতে চারুকলা অনুষদে শোভাযাত্রার প্রস্তুতি সরেজমিনে ঘুরে দেখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খান। এ সময় তিনি বলেন, ‘এই প্রতিকৃতি কেবল একটি শিল্প নয়, এটি অন্যায়ের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ার এক শক্তিশালী বার্তা।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা একটি বড় দায়িত্ব পালন করছি। পথে বাধা এসেছে, ষড়যন্ত্র হয়েছে, কিন্তু মানবিক শক্তি, শ্রম আর বিশ্বাসকে সঙ্গে নিয়ে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। সবাইকে এই চেষ্টার পাশে থাকার আহ্বান জানাই।’
চারুকলার প্রাঙ্গণে গিয়ে দেখা গেছে, শিল্পীরা দিনরাত পরিশ্রম করছেন। দ্রুত কাজ শেষ করতে ব্যবহার করা হচ্ছে ককশীটের মতো হালকা উপকরণ। সব উপকরণ পৌঁছে গেছে, চলছে সময়ের সঙ্গে লড়াই।
তবে এত স্বল্প সময়ে পুরোনো আকৃতির মতো প্রতিকৃতি নির্মাণ আদৌ সম্ভব কি না—সেটি নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সাইফুদ্দিন আহমদ। তিনি বলেন, ‘এক মাসের কাজ একদিনে করা সম্ভব নয়, তবে শিল্পীদের নিষ্ঠা আমাদের আশাবাদী করে তুলছে। তারা যা করছেন, তা অসাধারণ প্রচেষ্টা।’
শিল্পীদের এই প্রচেষ্টাকে স্বাগত জানিয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকীও। প্রস্তুতি ঘুরে দেখে তিনি বলেন, ‘এই আয়োজনের সঙ্গে যারা যুক্ত, তাদের প্রত্যেককে স্যালুট। ‘‘ফ্যাসিস্টের প্রতিকৃতি’’ পুড়িয়ে দেওয়ার মাধ্যমে শিল্পীদের মনোবল ভাঙার চেষ্টা হয়েছিল। কিন্তু এখানে এসে দেখলাম, তাদের মনোবল দ্বিগুণ শক্তিশালী হয়ে উঠেছে।’
এই প্রতিকৃতি এখন শুধু নববর্ষ উদযাপনের উপকরণ নয়, হয়ে উঠেছে প্রতিরোধের এক প্রতীকী ভাষ্য। সময়ের চাপ সত্ত্বেও শিল্পীরা বার্তা দিচ্ছেন—শিল্পকে দমন করা যায় না, শিল্প বেঁচে থাকে প্রতিরোধের মাঝেই।