
মাধবপুর (হবিগঞ্জ) প্রতিনিধি ::
হবিগঞ্জ জেলার মাধবপুর উপজেলার একমাত্র সরকারি মাধ্যমিক প্রতিষ্ঠান গোবিন্দপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষক সংকটসহ নানা সমস্যায় শিক্ষা কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। ১৯৩ বছরের ঐতিহ্যবাহী এ বিদ্যালয়ে শিক্ষক স্বল্পতা, শ্রেণিকক্ষ সংকট ও পরিকাঠামোগত দুর্বলতা শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যতকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলেছে।
বিদ্যালয়টিতে ২৭টি শিক্ষক পদের মধ্যে বর্তমানে মাত্র ১২ জন শিক্ষক রয়েছেন। বিশেষ করে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোতে শিক্ষক ঘাটতি চরমে—গণিতে ৩ পদের বিপরীতে রয়েছেন মাত্র ১ জন, ভৌতবিজ্ঞানে ২ পদের জায়গায় ১ জন, ইংরেজিতে ৪ পদের বিপরীতে ৩ জন, আর বাংলা বিষয়ে কোনো শিক্ষকই নেই। কৃষি শিক্ষা, চারুকলা ও ধর্ম শিক্ষা বিষয়েও কোনো শিক্ষক নেই।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক (চলতি দায়িত্বে) মো. আক্তার হোসেন জানান, বর্তমানে প্রায় ৬০০ শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত। প্রতিদিন শ্রেণি কার্য্যক্রম চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। শ্রেণিকক্ষেরও সংকট রয়েছে, মিলনায়তন বা কোনো সমাবেশকক্ষ নেই। এছাড়া শিক্ষকদের জন্য কোনো আবাসন সুবিধা না থাকায় দূরবর্তী শিক্ষকরা স্থায়ী হতে না পেরে বদলি হয়ে চলে যাচ্ছেন। তিনি আরও জানান, সদ্য দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়েছেন। শিক্ষক সংকট দূর হলে এবং প্রয়োজনীয় সহযোগীতা পেলে একাডেমিক কার্যক্রম গতিশীল করার মাধ্যমে আগামীদিনে বিপর্যয় কাটিয়ে ভালো কিছু করার আশাবাদী তিনি।
১৮৩২ সালে ব্রিটিশ শাসনামলে প্রতিষ্ঠিত এই প্রতিষ্ঠানটি শুরুতে ‘মধ্যবঙ্গ বিদ্যালয়’ নামে পরিচিত ছিল। ১৯৭৭ সালে এটি গোবিন্দপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় হিসেবে নবম-দশম শ্রেণি চালুর মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে উন্নীত হয়।
চলতি বছরের এসএসসি পরীক্ষায় ১৪১ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ১০২ জন উত্তীর্ণ হয়েছে। পাশের হার ৭২.৩৪ শতাংশ, যা পূর্বের শতভাগ পাশের তুলনায় ব্যর্থতার ইঙ্গিত দেয়। কেবল ৬ জন শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পায়।
এমন ফলাফলের পেছনে বিগত কয়েক বছর ধরে অটো পাস, ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে মার্কিং, প্রশ্নপত্র ফাঁস ও একাডেমিক অস্থিরতা দায়ী বলে মনে করছেন অভিভাবকরা। অনেকেই বলেন, “সরকারি বিদ্যালয়ে সন্তানকে ভর্তি করিয়েছি মানসম্মত শিক্ষার আশায়। কিন্তু শিক্ষক সংকট ও অনিয়মিত ক্লাসের কারণে সন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কিত।”
বিদ্যালয়টির পুরনো ভবনগুলো দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ায় দেয়ালে ফাটল ও রঙচটা চেহারায় ঐতিহ্য হারাতে বসেছে। নির্মাণাধীন ভবনের কাজ এখনো শেষ না হওয়ায় সেটিও ব্যবহার করা যাচ্ছে না।
স্থানীয়দের দাবি, দ্রুত শিক্ষক নিয়োগ, অবকাঠামো উন্নয়ন ও স্থায়ী শিক্ষক রাখার ব্যবস্থা না করা হলে এই ঐতিহ্যবাহী বিদ্যালয়টির দুর্দশা আরও বাড়বে এবং একটি প্রজন্ম শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হবে।