ঢাকা ০৭:৪৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ০৩ অগাস্ট ২০২৫, ১৯ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
Logo সৌদি আরবে একদিনেই ৮ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর Logo বিজয়নগরে দুই মোটরসাইকেল ও সিএনজির ত্রিমুখী সংঘর্ষে প্রাণ গেল ৪ জনের Logo “জনগণের টাকা লুটপাট করে বিদেশে বাড়ি করেছে আগের সরকার, এবার আর সেই সুযোগ নয়” — নবীগঞ্জে ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন Logo বাংলাবাজার পত্রিকার মাধবপুর প্রতিনিধি হলেন শেখ ইমন আহমেদ Logo পাহাড়, নদী ও লেকের অপার সৌন্দর্য নিয়ে অপেক্ষায় টাঙ্গুয়ার হাওর Logo দুটি গুরুত্বপূর্ণ তারিখের একটিতে জাতীয় নির্বাচনের সময় ঘোষণা করতে পারেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস Logo ১২ দিন পর খুললো মাইলস্টোন স্কুল, নেই শিক্ষার্থীদের সেই চিরচেনা হৈ-হুল্লোড় Logo জুলাই বিপ্লবের পক্ষে সাংবাদিকদের চাকরিচ্যুতি, দৈনিক জনকণ্ঠের কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা Logo বিএনপির স্থায়ী কমিটির সিদ্ধান্ত: সংসদীয় আসনের সীমানা নিয়ে ব্যক্তিগত আবেদন নয়, সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণ Logo খিলগাঁওয়ে পুরি-শিঙাড়া বিক্রেতাকে পিটিয়ে হত্যা

পাহাড়, নদী ও লেকের অপার সৌন্দর্য নিয়ে অপেক্ষায় টাঙ্গুয়ার হাওর

লেখক- সাংবাদিক ও ভ্রমণ পিপাসু টাঙ্গুয়ার হাওর সৌন্দর্যে অনন্য এক জলাভূমি। পর্যটকদের কাছে অতিপ্রিয়। ভরা বর্ষায় সেই রূপ উপচে পড়ে। হাওরের স্বচ্ছ জলে জলকেলি, রাতে জল-জোছনার মায়াবী খেলায় তনু–মন দুটোই জুড়িয়ে যায়। শেষ বিকেলে উত্তরের সবুজ মেঘালয় পাহাড়, আকাশে থাকা মেঘের ছায়া অন্য রকম এক মায়ায় বিলিয়ে দেয়, মুগ্ধতা ছড়ায় চারপাশে।হাওর, পাহাড়, নদী ও লেকের অপার সৌন্দর্য একসঙ্গে ধরা দেয় সুনামগঞ্জে।

লোগোর উপরে চাপ দিলেই চলে আসবেন আমাদের হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেলে,*

টাঙ্গুগুয়ার হাওর ও আশপাশের এলাকা ঘুরে তাই মুগ্ধতা নিয়ে ফেরেন পর্যটকেরা। টাঙ্গুগুয়ার হাওরে এলে পর্যটকেরা বাড়তি হিসেবে জাদুকাটা নদী, বারিক টিলা, শহীদ সিরাজ লেক (নীলাদ্রি লেক),শিমুলবাগান ও লাকমাছড়া ঘুরে যান। পুরো এলাকা কাছাকাছি, ছবির মতো সুন্দর। হাওর পর্যটনে নতুন মাত্রা যুক্ত করেছে হাউসবোট। আধুনিক সুযোগ-সুবিধাসহ টাঙ্গুগুয়ার হাওরে নিবন্ধিত প্রায় এক শ হাউসবোট আছে। এর বাইরে নানা জায়গা থেকে ছোট-বড় আরও শ খানেক নৌকা ও বোট আসে টাঙ্গুগুয়ার হাওরে। পর্যটকেরা এসব বোটে সারা দিন হাওরে ঘুরে বেড়ান, পরে বোটেই রাত যাপন করেন হাওরের টেকেরঘাট এলাকায়। আবার অনেক বোট সারা দিন ঘুরে পর্যটকদের নিয়ে হাওরে থেকে ফিরে আসে।পর্যটকদের নিয়ে টাঙ্গুগুয়ার হাওরে ভাসার অপেক্ষায় হাউসবোটগুলো হাউসবোট পরিচালনায় যুক্ত ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এসব বোটে প্যাকেজ হিসেবে হাওরে পর্যটকদের নেওয়া হয়।

অনলাইনে অনেকেই প্রচার করেন। হাওরে মূলত দুই দিনের প্যাকেজ হয়। সকালে পর্যটকেরা বোটে উঠবেন, সারা দিন হাওরে ঘুরবেন। বোটগুলো প্রথমে যায় হাওরের পর্যবেক্ষণ টাওয়ার এলাকায়। অনেকেই জলকেলি করেন। এখানে দুপুরের খাবার সেরে বোটগুলো রওনা হয় হাওরের উত্তরপাড়ে মেঘালয় পাহাড়ে পাদদেশে থাকা টেকেরঘাট এলাকায়। টেকেরঘাট এলাকায় বোটেই রাত যাপন করেন পর্যটকেরা। পরদিন আশপাশের এলাকা ঘুরে আবার হাওর থেকে ফিরে আসেন। অনেক বোট সুনামগঞ্জ পৌর শহরের সুরমা নদীর বিভিন্ন ঘাট থেকে যায়। আবার কিছু যায় তাহিরপুর উপজেলার আনোয়ারপুর এবং উপজেলা সদর থেকে।

শহর থেকে যেগুলো ছাড়ে, সেখানে পর্যটকেরা দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে এসে বোটে ওঠেন। অন্যরা তাহিরপুর গিয়ে তারপর যান।প্যাকেজ ছাড়াও অনেকেই পুরো বোট ভাড়া নিয়ে থাকেন। আবার কেউ কেউ এক দিনের জন্য নৌকা বা বোট ভাড়া করেন। বিলাসবহুল বোটগুলোয় শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র, জেনারেটরসহ আধুনিক সব সুযোগ সুবিধা আছে। পর্যটকেরা বোটে খাওয়াদাওয়া করেন। তাহিরপুরের ‘শহীদ সিরাজ লেক’। এটি নীলাদ্রী লেক নামেও পরিচিত হাওরে এখন পুরো বর্ষা। জলে টইটুম্বুর হাওর। ১৫ দিন ধরেই হাওরে পর্যটক আসা শুরু করেছেন। দিন দিন পর্যটকের সংখ্যা বাড়ছে। এলাকার নৌকাগুলোর মালিক-শ্রমিকেরাও ব্যস্থ সময় পার করছেন। হবিগঞ্জের মাধবপুর থেকে আমাদের ম্যাক্স ডুয়েল গ্রুপের সদস্যরা টাঙ্গুয়ার হাওর ভ্রমণের সীদ্ধান্ত হওয়ার পরই আমি সাংবাদিক(হামিদুর রহমান) সুনামগঞ্জ জেলা পরিষদের নির্বাহী কর্মকর্তা আয়েশা আক্তারের যোগাযোগ করি। যিনি পূর্বে হবিগঞ্জ সদর,চুনারুঘাট উপজেলার ইউএনও এবং মাধবপুরে সহকারী কমিশনার (ভূমি) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। আমাদের মাধবপুরবাসীর কাছে তিনি এক পরিচিত ও প্রিয় মুখ।

সুনামগঞ্জ ভ্রমণের সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর আমি ব্যক্তিগতভাবে ম্যাডামের সঙ্গে যোগাযোগ করি। তিনি খুশি মনেই জানান, আমরা যেন জেলা পরিষদের রেস্ট হাউজেই রাত্রীযাপন করি তিনি তা নিশ্চিত করেছেন। এমনকি নিজেই কনফার্ম করে জানালেন, “আপনারা আসবেন, রেস্ট হাউজ প্রস্তুুত থাকবে।”
হাওর ভ্রমণ শেষে রাতে যখন আমরা রেস্ট হাউজে পৌঁছাই, তখন তিনি নিজে এসে আমাদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। তাঁর এই আতিথেয়তায় আমরা সত্যিই অভিভূত ও কৃতজ্ঞ।

আজও তিনি সাবেক কর্মস্থল হবিগঞ্জের মাধবপুরকে নিজের “সেকেন্ড হোম” বলে গর্ব করে উল্লেখ করেন। বলেন, “মাধবপুরে আমার সময়কালে মানুষ যে সহযোগিতা করেছে,তা আমি কোনোদিন ভুলব না। আমাদের ভ্রমণ টিমের সদসরা হল অবসর প্রাক্তন শিক্ষক জাহাঙ্গীর আল,চৌমুহনী খুর্শিদ স্কুল এন্ড কলেজ এর পরিচলনা কমিটির সদস্য ছায়েদুর রহমান, শিক্ষক মাহবুবুল হাসান জনি,এহসানুল হক,ইমরুল হাসান শিবলী,কামরুজ্জামান, শিক্ষক আঞ্জব আলী,দেবপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক তাছাদ্দুক আহমেদ,কাস্টমস অফিসার গোলাপ খান(ইকবাল),বিএনপি নেতা আনিছুল আবদাল শাহ লিটন,খায়রুল ইসলাম, সাংবাদিক হামিদুর রহমান,সোহেল চৌধুরী।

শুক্রবার সকাল ৭টায় আমরা মাধবপুর উপজেলার চৌমুহনী বাজার মাইক্রোবাস যোগে যাত্রা শুরু করি। সকালের নাস্তা করি নোয়াহাটি স্থানীয় একটি হোটেলে ডিম,রুটি কেউ কেউ আলু বর্তা ডাল দিয়ে নাস্তা করে গাড়ী নিয়ে ছুটে চললাম সুনামগঞ্জের পথে। দুপুর ১২ টায় সুনামগঞ্জ শহরে গিয়ে পৌছে ছোট বোন নাহিদা আক্তারের বাসার সামনে জুম্মার নামায আদায় করে দুপুরের খাবার খেয়ে ছুটে চললাম তাহিরপুর নৌকা ঘাটে হাউজ বোট রেডি করার জন্যে পথিমধ্যে বিশ্বম্ভপুর উপজেলা পরিষদের সামনে হাওর বিলাসের সামনে গ্রæপ ছবি তুলি আড্ডা দেই। বর্ষাকালে সুনামগঞ্জের শিমুল বাগান ভ্রমণ এক অসাধারণ অভিজ্ঞতা হয়ে উঠতে পারে। চারপাশে সবুজের সমারোহ,টাঙ্গুগুয়ার হাওরের অথৈ জলরাশি আর আকাশ ছোঁয়া মেঘ সব মিলিয়ে যেন প্রকৃতি নিজেই আঁকছে এক জীবন্ত চিত্রপট। তাহিরপুর নৌকা ঘাটে গিয়ে আমরা হেলাল মিয়ার মালিকানাধিন ”বন্ধুর বাড়ি”একটি হাউজ বোট সারা দিনে ভাড়া লই সবাই মিলে।

১.সবুজ শিমুল বাগান।।
বসন্তে লাল ফুলে রাঙলেও বর্ষায় শিমুল বাগান রূপ নেয় সবুজের স্বপ্নভূমিতে। গাছে গাছে কোমল পাতা, নিচে ভেজা মাটি আর বৃষ্টির সুরে তৈরি হয় এক মোহনীয় পরিবেশ কিন্তুু বর্ষায় সবুজের সমারোহ সেজে আছে শিমুল বাগান।

সুনামগঞ্জ শিমুল বাগান

২.টাঙ্গুয়ার হাওর ভ্রমণ।।
বর্ষায় হাওর ভরে ওঠে পানিতে। নৌকায় চড়ে হাওরের বুকে ভাসতে ভাসতে দেখতে পাবেন মেঘে ঢাকা পাহাড়, ঢেউখেলা চর, আর অনন্ত জলরাশি। প্রকৃতির এক স্বর্গীয় অভিজ্ঞতা।

৩.বারেক টিলা ও জাদুকাটা নদী।।
সীমান্ত ঘেঁষা বারেক টিলা বিস্তৃত্ব ৩৬৫ একরজুড়ে। রঙিন গাছপালা, আঁকাবাঁকা মেটোপথ আর পাহাড়ের পটভূমি সব মিলিয়ে এক অন্য জগত। পাশেই বয়ে চলেছে জাদুকাটা নদী। স্বচ্ছ জলে নিচের বালির স্তর স্পষ্ট দেখা যায় যেন পানি ও বালির খেলা।

৪.লাকমাছড়া এক লুকানো রত্ন
টেকেরঘাটের লাকমাছড়া যেন প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য। একপাশে সবুজ পাহাড়, চুনাপাথরের খোঁজে ভারতের পাহাড়ি দৃশ্য,ঝুলন্ত বেইলি ব্রিজ, আর ছড়াজুড়ে ছড়িয়ে থাকা পাথর সব মিলিয়ে এক স্বপ্নজগত।

কীভাবে যাবেন?
সুনামগঞ্জ থেকে তাহিরপুর: লোকাল বাস, সিএনজি বা মাইক্রোবাসে যাওয়া যায়।
তাহিরপুর থেকে শিমুল বাগান: বর্ষায় নৌকা সবচেয়ে উপযুক্ত। মধ্যনগর থেকেও সরাসরি নৌকায় যাওয়া যায়। সুনামগঞ্জ হাওরের রাজধানী । কেউ বলেন, সুনামগঞ্জ হাওরের রাজধানী। আবার কেউ বলেন রূপের রানী। কবিদের কাছে এটি জোছনার শহর। হাওর, নদী, পাহাড় আর সবুজের এমন এক অপূর্ব মেলবন্ধন এখানে,যা মন ছুঁয়ে যায়।

শরৎকালে বর্ষার বিদায়ের সঙ্গে মেঘালয়ের পাহাড়ি হাওয়া এখানে আনে এক অনন্য সৌন্দর্য। তখন ঘুরে আসতে পারেন শিমুল বাগান, বারেক টিলা, জাদুকাটা নদী, শহীদ সিরাজউদ্দিন লেক এবং লাকমাছড়া। প্রকৃতিকে আপন করে পেতে চান? তাহলে বর্ষায় একবার ঘুরে আসুন সুনামগঞ্জের শিমুল বাগান ও টাঙ্গুয়ার হাওরে। এখানে প্রকৃতি কথা বলে, মন শান্ত হয়, হৃদয়ে জমে এক অমলিন স্মৃতি। লাকমাছড়ার মতো জায়গাগুলো না দেখলে প্রকৃত সুনামগঞ্জের সৌন্দর্য্য অপূর্ণ থেকে যাবে। হাওরকন্যা সুনামগঞ্জের রঙিন স্বপ্ন বারেকটিলা

সুনামগঞ্জ জেলার তাহিরপুর উপজেলার উত্তর বড়দল ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী এক অপরূপ প্রাকৃতিক স্থান বারেকটিলা। প্রায় ৩৬৫ একর এলাকাজুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে রঙ-বেরঙ্গের গাছপালা ও সবুজে মোড়া পাহাড়ি টিলা। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও জীববৈচিত্যে ভরপুর এই জায়গাটি যেন এক জীবন্ত ছবির ক্যানভাস। টিলার বুক চিরে চলে গেছে সরু সরু আঁকাবাঁকা মেটোপথ, যেগুলো ধরে হাঁটলে মনে হবে আপনি কোনো রূপকথার রাজ্যে পা রেখেছেন। হাত বাড়ালেই যেন ছুঁয়ে ফেলা যায় এই স্বর্গীয় সৌন্দর্য্য। এই মনোহর দৃশ্যপট উপভোগ করতে হলে আপনাকে যেতে হবে সুনামগঞ্জ জেলা শহর থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে তাহিরপুর উপজেলার শাহ আরেফিন (রহ.) এর আস্তানা ও ভারতের মেঘালয় পাহাড় থেকে নেমে আসা জাদুকাটা নদীসংলগ্ন বারিক্কা টিলাতে। স্থানীয়দের কাছে এটি ‘আইফেল টাওয়ার’ নামেও পরিচিত। উঁচু এই টিলার চূড়ায় দাঁড়ালে পাশের গ্রামগুলো সমতল ভূমির মতো মনে হয় এক অপূর্ব দৃষ্টিনন্দন দৃশ্য।

টিলার পাশ দিয়ে বয়ে চলেছে স্বচ্ছ জলের এক মুগ্ধকর নদী জাদুকাটা। এই নদীর পানির স্বচ্ছতা এমন যে, তলদেশের বালুকণাও স্পষ্ট দেখা যায়। যেন পানি ও বালির মাঝে চলে এক অবিরাম খেলা। বর্ষাকালে উত্তরের মেঘালয় পাহাড়ে ভেসে বেড়ানো সাদা মেঘগুলো এতটাই কাছে মনে হয়, যেন হাত বাড়ালেই ধরা যাবে। প্রকৃতি এখানে তার রূপের ভান্ডার অকৃপণভাবে উজাড় করে দিয়েছে। নীল রঙে রূপায়িত ‘নীলাদ্রি’: নীলের রাজ্যে হারিয়ে যাওয়ার গল্প নীল রঙের মোহময়তায় ঘেরা এক অপার সৌন্দর্যের নাম ‘নীলাদ্রি’। ভাবছেন, এটা কোথায়? কাশ্মীর নয় এই স্বর্গীয় সৌন্দর্য আমাদের দেশেই! অবাক হচ্ছেন? ছবিতে দেখলে সত্যিই কাশ্মীর ভেবে ভুল করে বসতে পারেন। তবে এই নয়নাভিরাম স্থানটি সবার কাছে পরিচিত ‘নীলাদ্রি লেক’ নামে। সুনামগঞ্জ জেলার সীমান্তবর্তী তাহিরপুর উপজেলার ট্যাকেরঘাট এলাকায় অবস্থিত এই লেকটির প্রকৃত নাম ছিল ট্যাকেরঘাট চুনাপাথর খনি। সময়ের পরিক্রমায় এটি এখন ‘নীলাদ্রি লেক’ বা স্থানীয়ভাবে ‘শহীদ সিরাজ লেক’ নামে পরিচিতি পেয়েছে।

প্রতিদিন শত শত পর্যটক এখানে ছুটে আসেন এক ঝলক নীলের রাজ্যে হারিয়ে যেতে। লেকের পাশে দাঁড়িয়ে মেঘালয়ের সবুজ পাহাড় আর চারপাশে ছড়িয়ে থাকা পাথরের মাঝে নীল জলরাশির মায়াজাল সত্যিই মন ছুঁয়ে যায়। আমরাও আমাদের ভ্রমণ দলের সদস্যদের নিয়ে আজ ঘুরে এসেছি টাঙ্গুয়ার হাওর হয়ে নীলাদ্রি লেক। লেকের পাশেই রয়েছে আরেকটি চমৎকার জলধারা লাকমা ছড়া। এটি একটি ছোট ঝর্ণা বা ছড়া,যা স্থানীয়ভাবে ‘লাকমা ছড়া’ নামেই পরিচিত। এটি নীলাদ্রি লেকের সৌন্দর্য্যকে আরও বাড়িয়ে দেয়। নীলাদ্রি লেকের নীল জল, মেঘালয় পাহাড়ের ছায়া, পাথরের সুনিপুণ বিন্যাস এবং লাকমা ছড়ার শীতল জলধারা সব মিলিয়ে এখানে এক নিঃশব্দ অথচ গভীর সৌন্দর্যের আবেশ রয়েছে।

এই দুই স্থান একসাথে ভ্রমণ করলে প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য আর শান্তির পরশ অনুভব করবেন নিশ্চিত। যাদের প্রকৃতি প্রেম রয়েছে, তাদের জন্য নীলাদ্রি লেক ও লাকমা ছড়া হতে পারে এক নিখুঁত গন্তব্য।

সাংবাদিক হামিদুর রহমান,মাধবপুর প্রতিনিধি,বাংলা টিভি

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

বাংলার খবর

জনপ্রিয় সংবাদ

সৌদি আরবে একদিনেই ৮ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর

error:

পাহাড়, নদী ও লেকের অপার সৌন্দর্য নিয়ে অপেক্ষায় টাঙ্গুয়ার হাওর

আপডেট সময় ০৩:০১:২১ অপরাহ্ন, রবিবার, ৩ অগাস্ট ২০২৫

লেখক- সাংবাদিক ও ভ্রমণ পিপাসু টাঙ্গুয়ার হাওর সৌন্দর্যে অনন্য এক জলাভূমি। পর্যটকদের কাছে অতিপ্রিয়। ভরা বর্ষায় সেই রূপ উপচে পড়ে। হাওরের স্বচ্ছ জলে জলকেলি, রাতে জল-জোছনার মায়াবী খেলায় তনু–মন দুটোই জুড়িয়ে যায়। শেষ বিকেলে উত্তরের সবুজ মেঘালয় পাহাড়, আকাশে থাকা মেঘের ছায়া অন্য রকম এক মায়ায় বিলিয়ে দেয়, মুগ্ধতা ছড়ায় চারপাশে।হাওর, পাহাড়, নদী ও লেকের অপার সৌন্দর্য একসঙ্গে ধরা দেয় সুনামগঞ্জে।

লোগোর উপরে চাপ দিলেই চলে আসবেন আমাদের হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেলে,*

টাঙ্গুগুয়ার হাওর ও আশপাশের এলাকা ঘুরে তাই মুগ্ধতা নিয়ে ফেরেন পর্যটকেরা। টাঙ্গুগুয়ার হাওরে এলে পর্যটকেরা বাড়তি হিসেবে জাদুকাটা নদী, বারিক টিলা, শহীদ সিরাজ লেক (নীলাদ্রি লেক),শিমুলবাগান ও লাকমাছড়া ঘুরে যান। পুরো এলাকা কাছাকাছি, ছবির মতো সুন্দর। হাওর পর্যটনে নতুন মাত্রা যুক্ত করেছে হাউসবোট। আধুনিক সুযোগ-সুবিধাসহ টাঙ্গুগুয়ার হাওরে নিবন্ধিত প্রায় এক শ হাউসবোট আছে। এর বাইরে নানা জায়গা থেকে ছোট-বড় আরও শ খানেক নৌকা ও বোট আসে টাঙ্গুগুয়ার হাওরে। পর্যটকেরা এসব বোটে সারা দিন হাওরে ঘুরে বেড়ান, পরে বোটেই রাত যাপন করেন হাওরের টেকেরঘাট এলাকায়। আবার অনেক বোট সারা দিন ঘুরে পর্যটকদের নিয়ে হাওরে থেকে ফিরে আসে।পর্যটকদের নিয়ে টাঙ্গুগুয়ার হাওরে ভাসার অপেক্ষায় হাউসবোটগুলো হাউসবোট পরিচালনায় যুক্ত ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এসব বোটে প্যাকেজ হিসেবে হাওরে পর্যটকদের নেওয়া হয়।

অনলাইনে অনেকেই প্রচার করেন। হাওরে মূলত দুই দিনের প্যাকেজ হয়। সকালে পর্যটকেরা বোটে উঠবেন, সারা দিন হাওরে ঘুরবেন। বোটগুলো প্রথমে যায় হাওরের পর্যবেক্ষণ টাওয়ার এলাকায়। অনেকেই জলকেলি করেন। এখানে দুপুরের খাবার সেরে বোটগুলো রওনা হয় হাওরের উত্তরপাড়ে মেঘালয় পাহাড়ে পাদদেশে থাকা টেকেরঘাট এলাকায়। টেকেরঘাট এলাকায় বোটেই রাত যাপন করেন পর্যটকেরা। পরদিন আশপাশের এলাকা ঘুরে আবার হাওর থেকে ফিরে আসেন। অনেক বোট সুনামগঞ্জ পৌর শহরের সুরমা নদীর বিভিন্ন ঘাট থেকে যায়। আবার কিছু যায় তাহিরপুর উপজেলার আনোয়ারপুর এবং উপজেলা সদর থেকে।

শহর থেকে যেগুলো ছাড়ে, সেখানে পর্যটকেরা দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে এসে বোটে ওঠেন। অন্যরা তাহিরপুর গিয়ে তারপর যান।প্যাকেজ ছাড়াও অনেকেই পুরো বোট ভাড়া নিয়ে থাকেন। আবার কেউ কেউ এক দিনের জন্য নৌকা বা বোট ভাড়া করেন। বিলাসবহুল বোটগুলোয় শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র, জেনারেটরসহ আধুনিক সব সুযোগ সুবিধা আছে। পর্যটকেরা বোটে খাওয়াদাওয়া করেন। তাহিরপুরের ‘শহীদ সিরাজ লেক’। এটি নীলাদ্রী লেক নামেও পরিচিত হাওরে এখন পুরো বর্ষা। জলে টইটুম্বুর হাওর। ১৫ দিন ধরেই হাওরে পর্যটক আসা শুরু করেছেন। দিন দিন পর্যটকের সংখ্যা বাড়ছে। এলাকার নৌকাগুলোর মালিক-শ্রমিকেরাও ব্যস্থ সময় পার করছেন। হবিগঞ্জের মাধবপুর থেকে আমাদের ম্যাক্স ডুয়েল গ্রুপের সদস্যরা টাঙ্গুয়ার হাওর ভ্রমণের সীদ্ধান্ত হওয়ার পরই আমি সাংবাদিক(হামিদুর রহমান) সুনামগঞ্জ জেলা পরিষদের নির্বাহী কর্মকর্তা আয়েশা আক্তারের যোগাযোগ করি। যিনি পূর্বে হবিগঞ্জ সদর,চুনারুঘাট উপজেলার ইউএনও এবং মাধবপুরে সহকারী কমিশনার (ভূমি) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। আমাদের মাধবপুরবাসীর কাছে তিনি এক পরিচিত ও প্রিয় মুখ।

সুনামগঞ্জ ভ্রমণের সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর আমি ব্যক্তিগতভাবে ম্যাডামের সঙ্গে যোগাযোগ করি। তিনি খুশি মনেই জানান, আমরা যেন জেলা পরিষদের রেস্ট হাউজেই রাত্রীযাপন করি তিনি তা নিশ্চিত করেছেন। এমনকি নিজেই কনফার্ম করে জানালেন, “আপনারা আসবেন, রেস্ট হাউজ প্রস্তুুত থাকবে।”
হাওর ভ্রমণ শেষে রাতে যখন আমরা রেস্ট হাউজে পৌঁছাই, তখন তিনি নিজে এসে আমাদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। তাঁর এই আতিথেয়তায় আমরা সত্যিই অভিভূত ও কৃতজ্ঞ।

আজও তিনি সাবেক কর্মস্থল হবিগঞ্জের মাধবপুরকে নিজের “সেকেন্ড হোম” বলে গর্ব করে উল্লেখ করেন। বলেন, “মাধবপুরে আমার সময়কালে মানুষ যে সহযোগিতা করেছে,তা আমি কোনোদিন ভুলব না। আমাদের ভ্রমণ টিমের সদসরা হল অবসর প্রাক্তন শিক্ষক জাহাঙ্গীর আল,চৌমুহনী খুর্শিদ স্কুল এন্ড কলেজ এর পরিচলনা কমিটির সদস্য ছায়েদুর রহমান, শিক্ষক মাহবুবুল হাসান জনি,এহসানুল হক,ইমরুল হাসান শিবলী,কামরুজ্জামান, শিক্ষক আঞ্জব আলী,দেবপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক তাছাদ্দুক আহমেদ,কাস্টমস অফিসার গোলাপ খান(ইকবাল),বিএনপি নেতা আনিছুল আবদাল শাহ লিটন,খায়রুল ইসলাম, সাংবাদিক হামিদুর রহমান,সোহেল চৌধুরী।

শুক্রবার সকাল ৭টায় আমরা মাধবপুর উপজেলার চৌমুহনী বাজার মাইক্রোবাস যোগে যাত্রা শুরু করি। সকালের নাস্তা করি নোয়াহাটি স্থানীয় একটি হোটেলে ডিম,রুটি কেউ কেউ আলু বর্তা ডাল দিয়ে নাস্তা করে গাড়ী নিয়ে ছুটে চললাম সুনামগঞ্জের পথে। দুপুর ১২ টায় সুনামগঞ্জ শহরে গিয়ে পৌছে ছোট বোন নাহিদা আক্তারের বাসার সামনে জুম্মার নামায আদায় করে দুপুরের খাবার খেয়ে ছুটে চললাম তাহিরপুর নৌকা ঘাটে হাউজ বোট রেডি করার জন্যে পথিমধ্যে বিশ্বম্ভপুর উপজেলা পরিষদের সামনে হাওর বিলাসের সামনে গ্রæপ ছবি তুলি আড্ডা দেই। বর্ষাকালে সুনামগঞ্জের শিমুল বাগান ভ্রমণ এক অসাধারণ অভিজ্ঞতা হয়ে উঠতে পারে। চারপাশে সবুজের সমারোহ,টাঙ্গুগুয়ার হাওরের অথৈ জলরাশি আর আকাশ ছোঁয়া মেঘ সব মিলিয়ে যেন প্রকৃতি নিজেই আঁকছে এক জীবন্ত চিত্রপট। তাহিরপুর নৌকা ঘাটে গিয়ে আমরা হেলাল মিয়ার মালিকানাধিন ”বন্ধুর বাড়ি”একটি হাউজ বোট সারা দিনে ভাড়া লই সবাই মিলে।

১.সবুজ শিমুল বাগান।।
বসন্তে লাল ফুলে রাঙলেও বর্ষায় শিমুল বাগান রূপ নেয় সবুজের স্বপ্নভূমিতে। গাছে গাছে কোমল পাতা, নিচে ভেজা মাটি আর বৃষ্টির সুরে তৈরি হয় এক মোহনীয় পরিবেশ কিন্তুু বর্ষায় সবুজের সমারোহ সেজে আছে শিমুল বাগান।

সুনামগঞ্জ শিমুল বাগান

২.টাঙ্গুয়ার হাওর ভ্রমণ।।
বর্ষায় হাওর ভরে ওঠে পানিতে। নৌকায় চড়ে হাওরের বুকে ভাসতে ভাসতে দেখতে পাবেন মেঘে ঢাকা পাহাড়, ঢেউখেলা চর, আর অনন্ত জলরাশি। প্রকৃতির এক স্বর্গীয় অভিজ্ঞতা।

৩.বারেক টিলা ও জাদুকাটা নদী।।
সীমান্ত ঘেঁষা বারেক টিলা বিস্তৃত্ব ৩৬৫ একরজুড়ে। রঙিন গাছপালা, আঁকাবাঁকা মেটোপথ আর পাহাড়ের পটভূমি সব মিলিয়ে এক অন্য জগত। পাশেই বয়ে চলেছে জাদুকাটা নদী। স্বচ্ছ জলে নিচের বালির স্তর স্পষ্ট দেখা যায় যেন পানি ও বালির খেলা।

৪.লাকমাছড়া এক লুকানো রত্ন
টেকেরঘাটের লাকমাছড়া যেন প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য। একপাশে সবুজ পাহাড়, চুনাপাথরের খোঁজে ভারতের পাহাড়ি দৃশ্য,ঝুলন্ত বেইলি ব্রিজ, আর ছড়াজুড়ে ছড়িয়ে থাকা পাথর সব মিলিয়ে এক স্বপ্নজগত।

কীভাবে যাবেন?
সুনামগঞ্জ থেকে তাহিরপুর: লোকাল বাস, সিএনজি বা মাইক্রোবাসে যাওয়া যায়।
তাহিরপুর থেকে শিমুল বাগান: বর্ষায় নৌকা সবচেয়ে উপযুক্ত। মধ্যনগর থেকেও সরাসরি নৌকায় যাওয়া যায়। সুনামগঞ্জ হাওরের রাজধানী । কেউ বলেন, সুনামগঞ্জ হাওরের রাজধানী। আবার কেউ বলেন রূপের রানী। কবিদের কাছে এটি জোছনার শহর। হাওর, নদী, পাহাড় আর সবুজের এমন এক অপূর্ব মেলবন্ধন এখানে,যা মন ছুঁয়ে যায়।

শরৎকালে বর্ষার বিদায়ের সঙ্গে মেঘালয়ের পাহাড়ি হাওয়া এখানে আনে এক অনন্য সৌন্দর্য। তখন ঘুরে আসতে পারেন শিমুল বাগান, বারেক টিলা, জাদুকাটা নদী, শহীদ সিরাজউদ্দিন লেক এবং লাকমাছড়া। প্রকৃতিকে আপন করে পেতে চান? তাহলে বর্ষায় একবার ঘুরে আসুন সুনামগঞ্জের শিমুল বাগান ও টাঙ্গুয়ার হাওরে। এখানে প্রকৃতি কথা বলে, মন শান্ত হয়, হৃদয়ে জমে এক অমলিন স্মৃতি। লাকমাছড়ার মতো জায়গাগুলো না দেখলে প্রকৃত সুনামগঞ্জের সৌন্দর্য্য অপূর্ণ থেকে যাবে। হাওরকন্যা সুনামগঞ্জের রঙিন স্বপ্ন বারেকটিলা

সুনামগঞ্জ জেলার তাহিরপুর উপজেলার উত্তর বড়দল ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী এক অপরূপ প্রাকৃতিক স্থান বারেকটিলা। প্রায় ৩৬৫ একর এলাকাজুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে রঙ-বেরঙ্গের গাছপালা ও সবুজে মোড়া পাহাড়ি টিলা। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও জীববৈচিত্যে ভরপুর এই জায়গাটি যেন এক জীবন্ত ছবির ক্যানভাস। টিলার বুক চিরে চলে গেছে সরু সরু আঁকাবাঁকা মেটোপথ, যেগুলো ধরে হাঁটলে মনে হবে আপনি কোনো রূপকথার রাজ্যে পা রেখেছেন। হাত বাড়ালেই যেন ছুঁয়ে ফেলা যায় এই স্বর্গীয় সৌন্দর্য্য। এই মনোহর দৃশ্যপট উপভোগ করতে হলে আপনাকে যেতে হবে সুনামগঞ্জ জেলা শহর থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে তাহিরপুর উপজেলার শাহ আরেফিন (রহ.) এর আস্তানা ও ভারতের মেঘালয় পাহাড় থেকে নেমে আসা জাদুকাটা নদীসংলগ্ন বারিক্কা টিলাতে। স্থানীয়দের কাছে এটি ‘আইফেল টাওয়ার’ নামেও পরিচিত। উঁচু এই টিলার চূড়ায় দাঁড়ালে পাশের গ্রামগুলো সমতল ভূমির মতো মনে হয় এক অপূর্ব দৃষ্টিনন্দন দৃশ্য।

টিলার পাশ দিয়ে বয়ে চলেছে স্বচ্ছ জলের এক মুগ্ধকর নদী জাদুকাটা। এই নদীর পানির স্বচ্ছতা এমন যে, তলদেশের বালুকণাও স্পষ্ট দেখা যায়। যেন পানি ও বালির মাঝে চলে এক অবিরাম খেলা। বর্ষাকালে উত্তরের মেঘালয় পাহাড়ে ভেসে বেড়ানো সাদা মেঘগুলো এতটাই কাছে মনে হয়, যেন হাত বাড়ালেই ধরা যাবে। প্রকৃতি এখানে তার রূপের ভান্ডার অকৃপণভাবে উজাড় করে দিয়েছে। নীল রঙে রূপায়িত ‘নীলাদ্রি’: নীলের রাজ্যে হারিয়ে যাওয়ার গল্প নীল রঙের মোহময়তায় ঘেরা এক অপার সৌন্দর্যের নাম ‘নীলাদ্রি’। ভাবছেন, এটা কোথায়? কাশ্মীর নয় এই স্বর্গীয় সৌন্দর্য আমাদের দেশেই! অবাক হচ্ছেন? ছবিতে দেখলে সত্যিই কাশ্মীর ভেবে ভুল করে বসতে পারেন। তবে এই নয়নাভিরাম স্থানটি সবার কাছে পরিচিত ‘নীলাদ্রি লেক’ নামে। সুনামগঞ্জ জেলার সীমান্তবর্তী তাহিরপুর উপজেলার ট্যাকেরঘাট এলাকায় অবস্থিত এই লেকটির প্রকৃত নাম ছিল ট্যাকেরঘাট চুনাপাথর খনি। সময়ের পরিক্রমায় এটি এখন ‘নীলাদ্রি লেক’ বা স্থানীয়ভাবে ‘শহীদ সিরাজ লেক’ নামে পরিচিতি পেয়েছে।

প্রতিদিন শত শত পর্যটক এখানে ছুটে আসেন এক ঝলক নীলের রাজ্যে হারিয়ে যেতে। লেকের পাশে দাঁড়িয়ে মেঘালয়ের সবুজ পাহাড় আর চারপাশে ছড়িয়ে থাকা পাথরের মাঝে নীল জলরাশির মায়াজাল সত্যিই মন ছুঁয়ে যায়। আমরাও আমাদের ভ্রমণ দলের সদস্যদের নিয়ে আজ ঘুরে এসেছি টাঙ্গুয়ার হাওর হয়ে নীলাদ্রি লেক। লেকের পাশেই রয়েছে আরেকটি চমৎকার জলধারা লাকমা ছড়া। এটি একটি ছোট ঝর্ণা বা ছড়া,যা স্থানীয়ভাবে ‘লাকমা ছড়া’ নামেই পরিচিত। এটি নীলাদ্রি লেকের সৌন্দর্য্যকে আরও বাড়িয়ে দেয়। নীলাদ্রি লেকের নীল জল, মেঘালয় পাহাড়ের ছায়া, পাথরের সুনিপুণ বিন্যাস এবং লাকমা ছড়ার শীতল জলধারা সব মিলিয়ে এখানে এক নিঃশব্দ অথচ গভীর সৌন্দর্যের আবেশ রয়েছে।

এই দুই স্থান একসাথে ভ্রমণ করলে প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য আর শান্তির পরশ অনুভব করবেন নিশ্চিত। যাদের প্রকৃতি প্রেম রয়েছে, তাদের জন্য নীলাদ্রি লেক ও লাকমা ছড়া হতে পারে এক নিখুঁত গন্তব্য।

সাংবাদিক হামিদুর রহমান,মাধবপুর প্রতিনিধি,বাংলা টিভি