ঢাকা ০১:৩৫ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

এক বছরে বন্ধ পৌনে ৪শ গার্মেন্টস, অস্থিরতার শঙ্কা

দেশের তৈরি পোশাক খাতে অস্থিরতা ক্রমেই বাড়ছে। গত এক বছরে সাভার, গাজীপুর, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ ও নরসিংদী এলাকায় ছোট-বড় মিলে প্রায় পৌনে ৪শ গার্মেন্টস বন্ধ হয়ে গেছে। এতে কর্মহীন হয়েছেন লক্ষাধিক শ্রমিক। সর্বশেষ নাসা গ্রুপের ১৬টি কারখানা স্থায়ীভাবে বন্ধ ঘোষণার পর শ্রমিকরা সড়কে নেমে বিক্ষোভ শুরু করেছেন। তাঁদের দাবিতে উত্তপ্ত হয়ে উঠছে শিল্পাঞ্চল, আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ছে আশপাশের কারখানাতেও।

শ্রমিকরা বলছেন, শুধু কারখানা বন্ধ করে বেতন পরিশোধ করলেই সমস্যা সমাধান হবে না। তাঁদের ভবিষ্যৎ কর্মসংস্থান নিশ্চিত করতে হবে। এদিকে তৈরি পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ জানিয়েছে, নাসা গ্রুপের শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধের দায়িত্ব সরকার নিয়েছে, তাই শ্রমিকদের আতঙ্কিত হওয়ার কারণ নেই।

বন্ধ কারখানা খুলে দেওয়ার দাবিতে আশুলিয়ায় ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেছেন শ্রমিকরা। এতে সড়কে দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়ে সাধারণ মানুষ চরম ভোগান্তিতে পড়েন। শ্রমিক নেতাদের মতে, গার্মেন্টস শিল্প বাংলাদেশের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি। একের পর এক কারখানা বন্ধ হলে রপ্তানি আয় কমে যাবে, বেকারত্ব বাড়বে এবং অন্যান্য শিল্প-সেবা খাতেও নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।

নাসা গ্রুপের মালিক নজরুল ইসলাম মজুমদার গত বছরের ২ অক্টোবর গুলশান থেকে গ্রেপ্তার হওয়ার পর থেকেই প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম টালমাটাল হয়ে পড়ে। গত ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে স্থায়ীভাবে গ্রুপের ১৬ কারখানা বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এর মধ্যে আশুলিয়ার নিশ্চিন্তপুরে ১০টি, গাজীপুরে ২টি, চট্টগ্রাম ইপিজেডে ২টি ও কুমিল্লা ইপিজেডে ২টি কারখানা রয়েছে। এতে প্রায় ৩০ হাজার শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছেন।

পাওনা মেটাতে নাসা গ্রুপ সম্পত্তি বিক্রির উদ্যোগ নিলেও শ্রমিক নেতারা বলছেন, এটি কোনো স্থায়ী সমাধান নয়। সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে কীভাবে কারখানাগুলো আবার চালু করা যায়। নাহলে হাজার হাজার শ্রমিক ও তাঁদের পরিবার মানবেতর জীবনযাপন করতে বাধ্য হবেন।

বিজিএমইএর জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ইনামুল হক খান বাবলু বলেন, শ্রমিকদের পাওনা সরকার মিটিয়ে দেবে। তবে কেবল বেতন পরিশোধ করলেই হবে না, কারখানা সচল করাই স্থায়ী সমাধান।

গার্মেন্টস শ্রমিক ঐক্য ফোরামের সভাপতি মোশরেফা মিশু বলেন, “৩০ হাজার শ্রমিকের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে গেল। পাওনা দিলেই সমাধান হবে না। এত মানুষ কোথায় যাবে, তাঁদের ভবিষ্যৎ কী— সেটাও ভাবতে হবে।”

একই সুরে গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক জলি তালুকদার বলেন, “নাসা গ্রুপের ১৬টি নয়, একের পর এক কারখানা বন্ধ হচ্ছে। হাজারো শ্রমিক বেকার হয়ে যাচ্ছে। আগেভাগেই সরকারের উদ্যোগ নেওয়া উচিত ছিল। এখনই বন্ধ কারখানাগুলো খুলে দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।”

আপলোডকারীর তথ্য

বাংলার খবর

জনপ্রিয় সংবাদ
error:

এক বছরে বন্ধ পৌনে ৪শ গার্মেন্টস, অস্থিরতার শঙ্কা

আপডেট সময় ০৫:২৮:৪৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ১ অক্টোবর ২০২৫

দেশের তৈরি পোশাক খাতে অস্থিরতা ক্রমেই বাড়ছে। গত এক বছরে সাভার, গাজীপুর, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ ও নরসিংদী এলাকায় ছোট-বড় মিলে প্রায় পৌনে ৪শ গার্মেন্টস বন্ধ হয়ে গেছে। এতে কর্মহীন হয়েছেন লক্ষাধিক শ্রমিক। সর্বশেষ নাসা গ্রুপের ১৬টি কারখানা স্থায়ীভাবে বন্ধ ঘোষণার পর শ্রমিকরা সড়কে নেমে বিক্ষোভ শুরু করেছেন। তাঁদের দাবিতে উত্তপ্ত হয়ে উঠছে শিল্পাঞ্চল, আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ছে আশপাশের কারখানাতেও।

শ্রমিকরা বলছেন, শুধু কারখানা বন্ধ করে বেতন পরিশোধ করলেই সমস্যা সমাধান হবে না। তাঁদের ভবিষ্যৎ কর্মসংস্থান নিশ্চিত করতে হবে। এদিকে তৈরি পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ জানিয়েছে, নাসা গ্রুপের শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধের দায়িত্ব সরকার নিয়েছে, তাই শ্রমিকদের আতঙ্কিত হওয়ার কারণ নেই।

বন্ধ কারখানা খুলে দেওয়ার দাবিতে আশুলিয়ায় ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেছেন শ্রমিকরা। এতে সড়কে দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়ে সাধারণ মানুষ চরম ভোগান্তিতে পড়েন। শ্রমিক নেতাদের মতে, গার্মেন্টস শিল্প বাংলাদেশের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি। একের পর এক কারখানা বন্ধ হলে রপ্তানি আয় কমে যাবে, বেকারত্ব বাড়বে এবং অন্যান্য শিল্প-সেবা খাতেও নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।

নাসা গ্রুপের মালিক নজরুল ইসলাম মজুমদার গত বছরের ২ অক্টোবর গুলশান থেকে গ্রেপ্তার হওয়ার পর থেকেই প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম টালমাটাল হয়ে পড়ে। গত ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে স্থায়ীভাবে গ্রুপের ১৬ কারখানা বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এর মধ্যে আশুলিয়ার নিশ্চিন্তপুরে ১০টি, গাজীপুরে ২টি, চট্টগ্রাম ইপিজেডে ২টি ও কুমিল্লা ইপিজেডে ২টি কারখানা রয়েছে। এতে প্রায় ৩০ হাজার শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছেন।

পাওনা মেটাতে নাসা গ্রুপ সম্পত্তি বিক্রির উদ্যোগ নিলেও শ্রমিক নেতারা বলছেন, এটি কোনো স্থায়ী সমাধান নয়। সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে কীভাবে কারখানাগুলো আবার চালু করা যায়। নাহলে হাজার হাজার শ্রমিক ও তাঁদের পরিবার মানবেতর জীবনযাপন করতে বাধ্য হবেন।

বিজিএমইএর জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ইনামুল হক খান বাবলু বলেন, শ্রমিকদের পাওনা সরকার মিটিয়ে দেবে। তবে কেবল বেতন পরিশোধ করলেই হবে না, কারখানা সচল করাই স্থায়ী সমাধান।

গার্মেন্টস শ্রমিক ঐক্য ফোরামের সভাপতি মোশরেফা মিশু বলেন, “৩০ হাজার শ্রমিকের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে গেল। পাওনা দিলেই সমাধান হবে না। এত মানুষ কোথায় যাবে, তাঁদের ভবিষ্যৎ কী— সেটাও ভাবতে হবে।”

একই সুরে গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক জলি তালুকদার বলেন, “নাসা গ্রুপের ১৬টি নয়, একের পর এক কারখানা বন্ধ হচ্ছে। হাজারো শ্রমিক বেকার হয়ে যাচ্ছে। আগেভাগেই সরকারের উদ্যোগ নেওয়া উচিত ছিল। এখনই বন্ধ কারখানাগুলো খুলে দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।”