ঢাকা ০৮:১১ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৬ অগাস্ট ২০২৫, ১ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

জুলাই বিপ্লবের পর বদলে যাওয়া সীমান্ত পরিস্থিতি: মাধবপুরে মাদক ও চোরাচালানের থাবা

বাংলার খবর ডেস্ক
জুলাই বিপ্লবের পর দেশের সার্বিক প্রেক্ষাপটে পরিবর্তন এসেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিশেষ করে পুলিশের দুর্বলতাকে কাজে লাগিয়ে সীমান্ত এলাকায় সক্রিয় হয়ে উঠেছে মাদক কারবারীরা। ফলে মাদক ব্যবসা ও চোরাচালান এখন নতুন কৌশলে বিস্তার লাভ করছে।

লোগোর উপরে চাপ দিলেই চলে আসবেন আমাদের হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেলে,*

হবিগঞ্জ জেলার সীমান্তবর্তী মাধবপুর উপজেলা ধীরে ধীরে দেশের অন্যতম মাদক ও চোরাচালানের ট্রানজিট পয়েন্টে পরিণত হয়েছে। ভারতীয় ত্রিপুরা রাজ্যের সঙ্গে প্রায় ৪০ কিলোমিটার সীমান্তজুড়ে থাকা ধর্মঘর, চৌমুহনী, বহরা ও শাহজাহানপুর ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী গ্রামগুলো ব্যবহার হচ্ছে ভারত থেকে ইয়াবা, ফেন্সিডিল, গাঁজা, স্কফ সিরাপ ও বিদেশি মদ আনতে।

সীমান্ত রুট ও সক্রিয় কারবারি

প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রের দাবি—এই চার ইউনিয়নে ২০০-২৫০ জন মাদক কারবারি সক্রিয় থাকলেও প্রকৃত সংখ্যা হাজার ছাড়িয়েছে। প্রায় ২০টি সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে প্রতিদিন অবাধে প্রবেশ করছে মাদকের চালান।

ধর্মঘর ইউনিয়ন: মোহনপুর, কালিকাপুর, দেবপুর, মুড়াবাড়ি, সস্তামোড়া, গন্ধবপুর, শিয়ালউড়ি, মালঞ্চপুর, নিজনগর

চৌমুহনী ইউনিয়ন: হরিণখোলা, কমলপুর, নয়নপুর, রামনগর, চৈতনপুর, রাজনগর, তুলশীপুর বাজার, চৌমুহনী বাজার

বহরা ইউনিয়ন: শ্রীধরপুর, দূর্লভপুর, দূর্গানগর, মনতলা রেলস্টেশন

শাহজাহানপুর ইউনিয়ন: জালুয়াবাদ, তেলিয়াপাড়া চা বাগান, রসুলপুরসহ চা বাগানের বিভিন্ন স্পট

এসব মাদক রেল ও সড়কপথে পৌঁছে যাচ্ছে দেশের নানা প্রান্তে।

শিক্ষার্থীদের টার্গেট করছে কারবারিরা

মাদক কারবারীরা বিশেষভাবে স্কুল-কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের টার্গেট করছে। অর্ধেক দামে মাদক সরবরাহ করে তাদের আসক্ত করছে এবং পাচারেও ব্যবহার করছে। হরষপুর, মনতলা ও নোয়াপাড়া রেলস্টেশনে ভিক্ষুক বা হকার সেজে মাদক পরিবহন করছে সংঘবদ্ধ চক্র।

খুচরা স্পট ও নারীর সম্পৃক্ততা

সীমান্তবর্তী গ্রামগুলোতে গড়ে উঠেছে খুচরা মাদক বিক্রির স্পট। প্রতিদিন ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ভৈরব, আশুগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, নরসিংদী থেকে দামি গাড়ি ও মোটরসাইকেলে ক্রেতারা আসে মাদক কিনতে। মাদক পরিবহনে নারীর সম্পৃক্ততা ক্রমেই বাড়ছে—কেউ শরীরে মাদক লুকিয়ে পাচার করছে, কেউ পাহারা দিচ্ছে, আবার কেউ অর্থ বিনিয়োগ করছে।

রাজনৈতিক প্রভাব ও বাধ্যতামূলক ব্যবসা

স্থানীয় প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তিদের অর্থ লগ্নি ও প্রভাবের অভিযোগও রয়েছে। অনেক মাদক ব্যবসায়ী জানান, মামলা-হামলার ভয় দেখিয়ে তাদের এ কাজে বাধ্য করা হয়। একবার কারও নামে মামলা হলে সে ব্যবসা ছেড়ে দিলেও নতুন চালানে আবার তার নাম যুক্ত হয়। ফলে তারা অবৈধ ব্যবসা থেকে বের হতে পারেন না।

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি

২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত মাধবপুর থানায় ১৩৪টি মাদক মামলা হয়েছে, গ্রেফতার হয়েছেন ১৫০ জনের বেশি। জব্দ হয়েছে বিপুল পরিমাণ গাঁজা, ফেন্সিডিল, বিদেশি মদ ও ইয়াবা।

প্রতিক্রিয়া

ডাঃ জরিফ হোসেন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আনোয়ার হোসেন বলেন,

“সীমান্তবর্তী এই অঞ্চলের অধিকাংশ নারী-পুরুষ এখন মাদকে জড়িয়ে পড়ছে। দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে সীমান্ত এলাকার পরিবেশ বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়বে।”

মাধবপুর থানার ওসি শহীদ উল্ল্যাহ জানান,

“আমি কিছুদিন আগে যোগদান করেছি। মাদক নির্মূলে আমরা জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করছি। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে মাদক জব্দ করা হচ্ছে।”

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

বাংলার খবর

error:

জুলাই বিপ্লবের পর বদলে যাওয়া সীমান্ত পরিস্থিতি: মাধবপুরে মাদক ও চোরাচালানের থাবা

আপডেট সময় ০৪:৩৫:১৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৬ অগাস্ট ২০২৫

বাংলার খবর ডেস্ক
জুলাই বিপ্লবের পর দেশের সার্বিক প্রেক্ষাপটে পরিবর্তন এসেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিশেষ করে পুলিশের দুর্বলতাকে কাজে লাগিয়ে সীমান্ত এলাকায় সক্রিয় হয়ে উঠেছে মাদক কারবারীরা। ফলে মাদক ব্যবসা ও চোরাচালান এখন নতুন কৌশলে বিস্তার লাভ করছে।

লোগোর উপরে চাপ দিলেই চলে আসবেন আমাদের হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেলে,*

হবিগঞ্জ জেলার সীমান্তবর্তী মাধবপুর উপজেলা ধীরে ধীরে দেশের অন্যতম মাদক ও চোরাচালানের ট্রানজিট পয়েন্টে পরিণত হয়েছে। ভারতীয় ত্রিপুরা রাজ্যের সঙ্গে প্রায় ৪০ কিলোমিটার সীমান্তজুড়ে থাকা ধর্মঘর, চৌমুহনী, বহরা ও শাহজাহানপুর ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী গ্রামগুলো ব্যবহার হচ্ছে ভারত থেকে ইয়াবা, ফেন্সিডিল, গাঁজা, স্কফ সিরাপ ও বিদেশি মদ আনতে।

সীমান্ত রুট ও সক্রিয় কারবারি

প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রের দাবি—এই চার ইউনিয়নে ২০০-২৫০ জন মাদক কারবারি সক্রিয় থাকলেও প্রকৃত সংখ্যা হাজার ছাড়িয়েছে। প্রায় ২০টি সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে প্রতিদিন অবাধে প্রবেশ করছে মাদকের চালান।

ধর্মঘর ইউনিয়ন: মোহনপুর, কালিকাপুর, দেবপুর, মুড়াবাড়ি, সস্তামোড়া, গন্ধবপুর, শিয়ালউড়ি, মালঞ্চপুর, নিজনগর

চৌমুহনী ইউনিয়ন: হরিণখোলা, কমলপুর, নয়নপুর, রামনগর, চৈতনপুর, রাজনগর, তুলশীপুর বাজার, চৌমুহনী বাজার

বহরা ইউনিয়ন: শ্রীধরপুর, দূর্লভপুর, দূর্গানগর, মনতলা রেলস্টেশন

শাহজাহানপুর ইউনিয়ন: জালুয়াবাদ, তেলিয়াপাড়া চা বাগান, রসুলপুরসহ চা বাগানের বিভিন্ন স্পট

এসব মাদক রেল ও সড়কপথে পৌঁছে যাচ্ছে দেশের নানা প্রান্তে।

শিক্ষার্থীদের টার্গেট করছে কারবারিরা

মাদক কারবারীরা বিশেষভাবে স্কুল-কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের টার্গেট করছে। অর্ধেক দামে মাদক সরবরাহ করে তাদের আসক্ত করছে এবং পাচারেও ব্যবহার করছে। হরষপুর, মনতলা ও নোয়াপাড়া রেলস্টেশনে ভিক্ষুক বা হকার সেজে মাদক পরিবহন করছে সংঘবদ্ধ চক্র।

খুচরা স্পট ও নারীর সম্পৃক্ততা

সীমান্তবর্তী গ্রামগুলোতে গড়ে উঠেছে খুচরা মাদক বিক্রির স্পট। প্রতিদিন ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ভৈরব, আশুগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, নরসিংদী থেকে দামি গাড়ি ও মোটরসাইকেলে ক্রেতারা আসে মাদক কিনতে। মাদক পরিবহনে নারীর সম্পৃক্ততা ক্রমেই বাড়ছে—কেউ শরীরে মাদক লুকিয়ে পাচার করছে, কেউ পাহারা দিচ্ছে, আবার কেউ অর্থ বিনিয়োগ করছে।

রাজনৈতিক প্রভাব ও বাধ্যতামূলক ব্যবসা

স্থানীয় প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তিদের অর্থ লগ্নি ও প্রভাবের অভিযোগও রয়েছে। অনেক মাদক ব্যবসায়ী জানান, মামলা-হামলার ভয় দেখিয়ে তাদের এ কাজে বাধ্য করা হয়। একবার কারও নামে মামলা হলে সে ব্যবসা ছেড়ে দিলেও নতুন চালানে আবার তার নাম যুক্ত হয়। ফলে তারা অবৈধ ব্যবসা থেকে বের হতে পারেন না।

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি

২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত মাধবপুর থানায় ১৩৪টি মাদক মামলা হয়েছে, গ্রেফতার হয়েছেন ১৫০ জনের বেশি। জব্দ হয়েছে বিপুল পরিমাণ গাঁজা, ফেন্সিডিল, বিদেশি মদ ও ইয়াবা।

প্রতিক্রিয়া

ডাঃ জরিফ হোসেন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আনোয়ার হোসেন বলেন,

“সীমান্তবর্তী এই অঞ্চলের অধিকাংশ নারী-পুরুষ এখন মাদকে জড়িয়ে পড়ছে। দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে সীমান্ত এলাকার পরিবেশ বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়বে।”

মাধবপুর থানার ওসি শহীদ উল্ল্যাহ জানান,

“আমি কিছুদিন আগে যোগদান করেছি। মাদক নির্মূলে আমরা জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করছি। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে মাদক জব্দ করা হচ্ছে।”