ঢাকা ০৩:২০ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৫ মে ২০২৫, ৩১ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন: চট্টগ্রাম-১৪ বিএনপির ৫, জামায়াতের একক এলডিপির প্রার্থী অলির ছেলে

চট্টগ্রাম-১৪ (চন্দনাইশ-সাতকানিয়া আংশিক) আসনটি চন্দনাইশের ২টি পৌরসভা, ৮টি ইউনিয়ন এবং সাতকানিয়ার ৬টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত। এক সময় আসনটি বিএনপির ঘাঁটি হিসাবে পরিচিত ছিল। সাবেক মন্ত্রী কর্নেল (অব.) অলি আহমদ বীর বিক্রম বিএনপি ছেড়ে এলডিপি গঠনের পর এই আসনটিও যেন এলডিপির ঘাঁটিতে পরিণত হয়েছিল। সময়ের পরিক্রমায় এখন এই আসনে বিএনপির একক আধিপত্য খর্ব হয়েছে। মাঝে বিনা ভোটের নির্বাচনে তিন মেয়াদে আওয়ামী লীগের এমপি হয়ে নজরুল ইসলাম চৌধুরী রাজত্ব করলেও ৫ আগস্টের পর তিনি লাপাত্তা। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এখানকার রাজনীতিতে কী ধরনের মেরুকরণ হয় সেটিই এখন দেখার বিষয়।

নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা না হলেও দলগুলো প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে। মনোনয়নপ্রত্যাশীরাও সরব ভোটের মাঠে। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি), বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নেতারা এলাকা চষে বেড়াচ্ছেন। রমজানে নির্বাচনি এলাকায় ইফতার আয়োজন করে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরেছেন। এছাড়া আলোচনা সভা, ইফতারসামগ্রী ও কাপড় বিতরণ করেন তারা। এই আসনে এলডিপি থেকে অলি আহমদের ছেলে অধ্যাপক ওমর ফারুক নির্বাচন করবেন। বিএনপি থেকে প্রত্যাশী পাঁচজন-ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাকালীন যুগ্ম সম্পাদক সাবেক বিচারপতি আবদুস সালাম মামুন, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক মহসিন জিল্লুল করিম, সাবেক সংসদ-সদস্য অ্যাডভোকেট মিজানুর রহমান, চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক দুবারের সভাপতি ও দুবারের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নাজিম উদ্দিন চৌধুরী, চন্দনাইশ উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও সাবেক চেয়ারম্যান নুরুল আনোয়ার চৌধুরী। অন্যদিকে জামায়াতের একক প্রার্থী দলটির চিকিৎসক সংগঠনের দায়িত্বশীল ডা. শাহাদাত হোসেন।

অলি আহমদ বিএনপিতে থাকতে এই আসনে পরপর ৫ বার এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন। ছিলেন বিএনপি সরকারের প্রভাবশালী মন্ত্রী। যোগাযোগমন্ত্রী থাকাকালে চন্দনাইশে যোগাযোগ ও অবকাঠামোগতভাবে অনেক উন্নয়ন করার পর স্থানীয়রা অলি ভক্ত হয়ে পড়েন। তাদের কাছে দলের চেয়েও যেন ‘অলি’ বড় এই অবস্থার সৃষ্টি হয়। এ কারণে এলডিপি গঠনের পরও তিনি সংসদ-সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনে এলডিপি থেকে অলি প্রার্থী হবেন না বলে ইতোমধ্যে ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি তার ছেলে ও দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক ওমর ফারুককে প্রার্থী ঘোষণা করেছেন। তবে এবারের নির্বাচনে ভোটে প্রভাব পড়বে নতুন ভোটারের। তাই নতুন ভোটারদের দলে আনার জন্য বিএনপি, এলডিপি ও জামায়াতে ইসলামী নতুন নতুন কৌশল অবলম্বন করছে।

১৯৭৬ সালে চন্দনাইশ থানা প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর এ আসনে ১৯৭৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি দ্বিতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রথমবারের মতো সংসদ-সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন বিএনপির প্রয়াত নেতা ব্যারিস্টার মাহবুবুল কবির চৌধুরী। পরে তিনি রাষ্ট্রদূত হলে ১৯৮১ সালে উপনির্বাচনে বিএনপি থেকে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে কর্নেল (অব.) অলি আহমদ প্রথম সংসদ-সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর টানা আরও চারবার বিজয়ী হন তিনি। ২০০৬ সালে বিএনপি থেকে বেরিয়ে এলডিপি প্রতিষ্ঠা করেন। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ছাতা প্রতীক নিয়ে আবারও জয়লাভ করেন তিনি। আওয়ামী লীগের প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার আফছার উদ্দিন আহমদ চৌধুরীকে হারান তিনি।

এলডিপির প্রার্থী অধ্যাপক ওমর ফারুক যুগান্তরকে বলেন, চন্দনাইশ-সাতকানিয়াকে আমি চাই একটি আধুনিক, নিরাপদ ও মানবিক উপশহর হিসাবে গড়ে তুলতে, যেখানে প্রতিটি নাগরিকের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত হবে। তরুণরা কর্মসংস্থানে আত্মনির্ভর এবং প্রবীণরা সম্মানিত হবেন। আমার ভিশন চন্দনাইশ-সাতকানিয়াকে দুর্নীতিমুক্ত একটি মডেল এলাকা হিসাবে গড়ে তোলা। আমি বিশ্বাস করি জনগণের স্বপ্নই আমার পথচলার শক্তি।

বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী অ্যাডভোকেট নাজিম উদ্দিন চৌধুরী যুগান্তরকে বলেন, বিগত ১৬ বছরে বিএনপি, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের হাজার হাজার নেতা মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলার শিকার হয়েছেন। শুধু চন্দনাইশ নয়; পুরো দক্ষিণ চট্টগ্রামে দলীয় নেতাকর্মীদের আইনি সহায়তা দিয়ে এসেছি। এছাড়া এলাকার মানুষের সঙ্গেও আমার নিবিড় যোগাযোগ রয়েছে। আমি আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন চাইব দলের কাছে। আশা করছি দল আমাকে মূল্যায়ন করবে।

জামায়াতের প্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেন যুগান্তরকে বলেন, আমি জনগণের জন্য রাজনীতি করি। চট্টগ্রাম-১৪ আসনটিকে আমি শান্তিপূর্ণ এলাকা হিসাবে গড়ে তুলব। যেখানে জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সবাই সমান অধিকার ভোগ করবেন। এলাকায় চুরি, ডাকাতি, মাদকসহ অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড ঠেকাতে সাধারণ মানুষকে সম্পৃক্ত করে কাজ করব। চন্দনাইশ-সাতকানিয়াকে আধুনিক উপশহর হিসাবে গড়ব।

আপলোডকারীর তথ্য

Liton Bin Islam

ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন: চট্টগ্রাম-১৪ বিএনপির ৫, জামায়াতের একক এলডিপির প্রার্থী অলির ছেলে

আপডেট সময় ০৮:৪৯:৫১ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৫

চট্টগ্রাম-১৪ (চন্দনাইশ-সাতকানিয়া আংশিক) আসনটি চন্দনাইশের ২টি পৌরসভা, ৮টি ইউনিয়ন এবং সাতকানিয়ার ৬টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত। এক সময় আসনটি বিএনপির ঘাঁটি হিসাবে পরিচিত ছিল। সাবেক মন্ত্রী কর্নেল (অব.) অলি আহমদ বীর বিক্রম বিএনপি ছেড়ে এলডিপি গঠনের পর এই আসনটিও যেন এলডিপির ঘাঁটিতে পরিণত হয়েছিল। সময়ের পরিক্রমায় এখন এই আসনে বিএনপির একক আধিপত্য খর্ব হয়েছে। মাঝে বিনা ভোটের নির্বাচনে তিন মেয়াদে আওয়ামী লীগের এমপি হয়ে নজরুল ইসলাম চৌধুরী রাজত্ব করলেও ৫ আগস্টের পর তিনি লাপাত্তা। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এখানকার রাজনীতিতে কী ধরনের মেরুকরণ হয় সেটিই এখন দেখার বিষয়।

নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা না হলেও দলগুলো প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে। মনোনয়নপ্রত্যাশীরাও সরব ভোটের মাঠে। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি), বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নেতারা এলাকা চষে বেড়াচ্ছেন। রমজানে নির্বাচনি এলাকায় ইফতার আয়োজন করে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরেছেন। এছাড়া আলোচনা সভা, ইফতারসামগ্রী ও কাপড় বিতরণ করেন তারা। এই আসনে এলডিপি থেকে অলি আহমদের ছেলে অধ্যাপক ওমর ফারুক নির্বাচন করবেন। বিএনপি থেকে প্রত্যাশী পাঁচজন-ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাকালীন যুগ্ম সম্পাদক সাবেক বিচারপতি আবদুস সালাম মামুন, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক মহসিন জিল্লুল করিম, সাবেক সংসদ-সদস্য অ্যাডভোকেট মিজানুর রহমান, চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক দুবারের সভাপতি ও দুবারের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নাজিম উদ্দিন চৌধুরী, চন্দনাইশ উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও সাবেক চেয়ারম্যান নুরুল আনোয়ার চৌধুরী। অন্যদিকে জামায়াতের একক প্রার্থী দলটির চিকিৎসক সংগঠনের দায়িত্বশীল ডা. শাহাদাত হোসেন।

অলি আহমদ বিএনপিতে থাকতে এই আসনে পরপর ৫ বার এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন। ছিলেন বিএনপি সরকারের প্রভাবশালী মন্ত্রী। যোগাযোগমন্ত্রী থাকাকালে চন্দনাইশে যোগাযোগ ও অবকাঠামোগতভাবে অনেক উন্নয়ন করার পর স্থানীয়রা অলি ভক্ত হয়ে পড়েন। তাদের কাছে দলের চেয়েও যেন ‘অলি’ বড় এই অবস্থার সৃষ্টি হয়। এ কারণে এলডিপি গঠনের পরও তিনি সংসদ-সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনে এলডিপি থেকে অলি প্রার্থী হবেন না বলে ইতোমধ্যে ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি তার ছেলে ও দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক ওমর ফারুককে প্রার্থী ঘোষণা করেছেন। তবে এবারের নির্বাচনে ভোটে প্রভাব পড়বে নতুন ভোটারের। তাই নতুন ভোটারদের দলে আনার জন্য বিএনপি, এলডিপি ও জামায়াতে ইসলামী নতুন নতুন কৌশল অবলম্বন করছে।

১৯৭৬ সালে চন্দনাইশ থানা প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর এ আসনে ১৯৭৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি দ্বিতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রথমবারের মতো সংসদ-সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন বিএনপির প্রয়াত নেতা ব্যারিস্টার মাহবুবুল কবির চৌধুরী। পরে তিনি রাষ্ট্রদূত হলে ১৯৮১ সালে উপনির্বাচনে বিএনপি থেকে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে কর্নেল (অব.) অলি আহমদ প্রথম সংসদ-সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর টানা আরও চারবার বিজয়ী হন তিনি। ২০০৬ সালে বিএনপি থেকে বেরিয়ে এলডিপি প্রতিষ্ঠা করেন। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ছাতা প্রতীক নিয়ে আবারও জয়লাভ করেন তিনি। আওয়ামী লীগের প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার আফছার উদ্দিন আহমদ চৌধুরীকে হারান তিনি।

এলডিপির প্রার্থী অধ্যাপক ওমর ফারুক যুগান্তরকে বলেন, চন্দনাইশ-সাতকানিয়াকে আমি চাই একটি আধুনিক, নিরাপদ ও মানবিক উপশহর হিসাবে গড়ে তুলতে, যেখানে প্রতিটি নাগরিকের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত হবে। তরুণরা কর্মসংস্থানে আত্মনির্ভর এবং প্রবীণরা সম্মানিত হবেন। আমার ভিশন চন্দনাইশ-সাতকানিয়াকে দুর্নীতিমুক্ত একটি মডেল এলাকা হিসাবে গড়ে তোলা। আমি বিশ্বাস করি জনগণের স্বপ্নই আমার পথচলার শক্তি।

বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী অ্যাডভোকেট নাজিম উদ্দিন চৌধুরী যুগান্তরকে বলেন, বিগত ১৬ বছরে বিএনপি, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের হাজার হাজার নেতা মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলার শিকার হয়েছেন। শুধু চন্দনাইশ নয়; পুরো দক্ষিণ চট্টগ্রামে দলীয় নেতাকর্মীদের আইনি সহায়তা দিয়ে এসেছি। এছাড়া এলাকার মানুষের সঙ্গেও আমার নিবিড় যোগাযোগ রয়েছে। আমি আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন চাইব দলের কাছে। আশা করছি দল আমাকে মূল্যায়ন করবে।

জামায়াতের প্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেন যুগান্তরকে বলেন, আমি জনগণের জন্য রাজনীতি করি। চট্টগ্রাম-১৪ আসনটিকে আমি শান্তিপূর্ণ এলাকা হিসাবে গড়ে তুলব। যেখানে জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সবাই সমান অধিকার ভোগ করবেন। এলাকায় চুরি, ডাকাতি, মাদকসহ অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড ঠেকাতে সাধারণ মানুষকে সম্পৃক্ত করে কাজ করব। চন্দনাইশ-সাতকানিয়াকে আধুনিক উপশহর হিসাবে গড়ব।