
পারভেজ হাসান লাখাই থেকেঃ
চমকপ্রদক বাহারি রংয়ের মিষ্টির প্যাকেটে মিষ্টি কিনে দীর্ঘদিন ধরে প্রতারিত হয়ে আসছে লাখাই উপজেলার সাধারণ ক্রেতারা।আর এতে করে লাভবান হচ্ছেন ওজন কারসাজির সাথে জড়িত কিছু অসাধু মিষ্টির ব্যবসায়ী।
অধিক মুনাফা লাভের আশায় অতিরিক্ত ওজনের প্যাকেটে অভিনব কায়দায় দীর্ঘদিন ধরে তারা মিষ্টি বিক্রি করে গ্রাহক ঠকিয়ে আসছে।
গ্রাহকদের এমন অভিযোগের ভিত্তিতে মঙ্গলবার ( ২৯ এপ্রিল) বিকেলে উপজেলার কালাউক বাজারের বিভিন্ন মিষ্টির দোকান ঘুরে গ্রাহকদের অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় অধিকাংশ দোকানে ৩ ধরনের মিষ্টির প্যাকেট রয়েছে। দোকানের সামনে ব্যাবসা প্রতিষ্ঠানের নাম সম্বলিত কিছু প্যাকেট সাজিয়ে রাখা হয়েছে যার ওজন ৭০ থেকে ১০০ গ্রামের মধ্যে। ভেতরে কিছু প্যাকেট তাকের মধ্যে সাজানো রয়েছে যেগুলোর ওজন ১৪০ থেকে ১৯০ গ্রামের মধ্যে। আর মিষ্টি বিক্রির জন্য যেগুলো প্রস্তুত করে রাখা হয়েছে সেগুলোর ওজন ২২০ থেকে ৩১০ গ্রাম।
প্যাকেটের বিভিন্ন ধরন সম্পর্কে জানতে চাইলে ব্যাবসায়ীরা বলেন, লাখাইয়ে মিষ্টির নির্ধারিত কোন মূল্য নেই।একেক দোকানদার একেক রকম দামে বিক্রি করে। এতে করে দোকানদাররা গ্রাহকদের কাছে মিষ্টি বিক্রির সময় সমস্যায় পড়তে হয়।
অনেক সময় গ্রাহকরা মিষ্টি যখন কম দামে নিতে চায় তখন বেশি ওজনের প্যাকেটে তাদের মিষ্টি দেওয়া হয় এতে করে দাম কম হলেও প্যাকেটের ওজনের কারণে কিছুটা হলেও পুষিয়ে নেওয়া যায়।
তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মাঝারি ওজনের প্যাকেটে মিষ্টি বিক্রি করা হয়।আর নিজস্ব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নামে ৬০ গ্রাম বা ১০০ গ্রাম ওজনের প্যাকেটগুলো শুধুমাত্র আইনী জটিলতা থেকে বাঁচার জন্য সাজিয়ে রাখা হয় বলে ও জানান।
কালাউক বাজারের অর্পিতা মিষ্টান্ন ভান্ডার,বুল্লা বাজারের শুভন মিষ্টান্ন ভান্ডার, প্রভিন্ড মিষ্টান্ন ভান্ডার,ননী গোপাল মিষ্টান্ন ভান্ডার সহ বেশ কিছু দোকানদার দীর্ঘদিন ধরে ক্রেতাদের সাথে এমন অভিনব কায়দায় প্রতারণা করে আসছে।শুধু তাই নয় এ সকল মিষ্টির দোকানে নেই কোন মিষ্টি নির্ধারিত মেয়াদের তারিখ। যা বিগত কিছুদিন আগে ভোক্তা অধিকার কর্তৃক বিভিন্ন জরিমানা করে মিষ্টির নির্ধারিত মেয়াদের তারিখ দিয়ে রাখতে বলা হয়েছিল। যা কেউ এখন পর্যন্ত করেনি। শুধু বুললা বাজারের মোদক মিষ্টান্ন ভান্ডারে অল্প ওজনের কার্টুন এবং মিষ্টির নির্ধারিত মেয়াদ এর তারিখের তালিকা পাওয়া গিয়েছে।
এ বিষয়ে অর্পিতা মিষ্টান্ন ভান্ডারের মালিকের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন,আমার দোকানের মিষ্টি কার্টুন ১৫০গ্রাম থেকে ২০০ গ্রামের ভিতরে বলে জানান।ওজন অতিরিক্ত কিনা জানতে চাইলে বলেন,আর হবেনা আমি কার্টুনের ওজন কমিয়ে দেব।
সাধারণ ক্রেতাদের দাবি দোকানদারদের জন্য মিষ্টির একটি নির্দিষ্ট মূল্য ঠিক করে দিলে ক্রেতাদের এ ধরনের বিড়ম্বনার শিকার হতে হবে না।
বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে বুল্লা বাজার ব্যবসায়িক কল্যাণ সমিতির সাবেক সভাপতি আশিক আহমেদ রাজিবের কাছে ফোন করলে তিনি বলেন,অতীতে আমরা এগুলা নির্মূল করেছি, এখন যদি কেউ এগুলা করে থাকে তাহলে আমাদের অগোচরে করছে।
এ ব্যাপারে ভোক্তা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক শ্যামল পুরকায়স্থ এর সাথে আলাপকালে তিনি বলেন, মিষ্টির কার্টুনের ওজন বাদ দিয়েই ক্রেতাদের নেট ওজনে মিষ্টি দিতে হবে। আইন অনুযায়ী মিষ্টির সাথে এক গ্রাম ওজনের কাটুন দেওয়াও কোন নিয়ম নেই। কিছুতেই কার্টুনের ওজনসহ মিষ্টি বিক্রি করা যাবে না। তারপরও আমরা যেটা করি সেটা হলো কার্টুনের ওজন ৫০ গ্রামের নিচে হলে ঠিক আছে। কিছুতেই ৫০ গ্রামের ওজনে বেশি মিষ্টির কার্টুন হওয়া যাবে না। যারা অতিরিক্ত ওজনের মিষ্টির কার্টুনে মিষ্টি বিক্রি করেন, আমি তাদের বিষয়টা খোঁজ নিয়ে দেখব। এবং প্রতিটি দোকানে তদারকি করব।