ঢাকা ১২:৩০ অপরাহ্ন, সোমবার, ১২ মে ২০২৫, ২৯ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
Logo ‘মুক্তিযুদ্ধে গণহত্যায় সহযোগীদের রাজনৈতিক অবস্থান স্পষ্ট করতে হবে’ Logo জামালপুরে ফুটবল লীগ আয়োজনে ডিএফএ ও ক্লাব প্রতিনিধিদের সভা অনুষ্ঠিত Logo ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ: কয়েক দিনের সংঘাতে ভয়াবহ ক্ষয়ক্ষতি, যুদ্ধবিরতিতে স্বস্তির নিশ্বাস Logo আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করায় গরু জবাই করে বিরিয়ানি খাওয়ালেন ইসলামি বক্তা মাওলানা রফিকুল ইসলাম মাদানী Logo মাধবপুরে চলমান উন্নয়ন প্রকল্প পরিদর্শন করলেন ইউএনও জাহিদ বিন কাশেম Logo “সাংবাদিক ও রাজনীতিবিদ: নিরপেক্ষতা কি সম্ভব?” Logo পিনাকী ভট্টাচার্য, ইলিয়াস হোসেন, ড. কনক সরওয়ার ও জুলকারনাইন সায়েরের ইউটিউব চ্যানেল ব্লক করে দিয়েছে ভারত Logo মাস্ক ও লুঙ্গি পরে বিমানবন্দর ত্যাগ করেন সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ Logo আগেও দুইবার আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল Logo মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়েছে ভারত ও পাকিস্তান

কলেজছাত্রকে অপহরণ করে ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি যুবদল নেতার

  • অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট সময় ০৯:২৮:০০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৪ জানুয়ারী ২০২৫
  • ৬২০ Time View

পাবনা সদরের চরতারাপুরে সোহাগ ইসলাম (২৫) নামে একজন কলেজছাত্রকে শরীরে শর্টগান ঠেকিয়ে অপহরণ করে মুক্তিপণ হিসেবে ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবির অভিযোগ উঠেছে এক যুবদল নেতার বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী সোহাগের চাচাতো ভাই গুলিবিদ্ধ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

গতকাল সোমবার (১৩ জানুয়ারি) রাত ১১টার দিকে চরতারাপুর ইউনিয়নের শুকচোর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। অপহরণের ৫ ঘণ্টা পর রাত ৪টার দিকে তাকে উদ্ধার করে পুলিশ।
অপহৃত সোহাগ চরতারাপুর ইউনিয়নের শুকচর গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য তোফাজ্জল হোসেন তোফাই মেম্বারের ছেলে। তিনি পাবনা সরকারি এডওয়ার্ড কলেজ থেকে অনার্স শেষ করে ঢাকায় চাকরির প্রস্তুতি নিচ্ছেন। আর গুলিবিদ্ধ রফিকুল ইসলাম অন্তু একই গ্রামের মোফাজ্জল প্রামানিকের ছেলে। তিনিও সরকারি এডওয়ার্ড কলেজে পড়াশোনা করেন।

অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, ইউনিয়নের শুকচোর গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য তোফাজ্জল হোসেন তোফাই দীর্ঘদিন ধরে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে শয্যাশায়ী অবস্থায় মানবেতর জীবনযাপন করছেন। ঢাকায় চিকিৎসার জন্য জমি বিক্রি করে বাড়িতে টাকা রেখেছিলেন। দু-একদিনের মধ্যে ঢাকায় নেওয়ার কথা ছিল। গতকাল রাত ১১টার পর বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন তার ছেলে সোহাগ। এ সময় সন্ত্রাসীরা এসে প্রথমে ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে শরীরে শর্টগান ঠেকিয়ে তাকে বাড়ি থেকে জোরপূর্বক অপহরণ করেন ইউনিয়ন যুবদলের প্রচার সম্পাদক কুতুব উদ্দিন, বিএনপি নেতা পরিচয় দেওয়া মুতাহার হোসেন মোতাই ও রেজাউল করিম।

তাদের বাধা দিতে গেলে সোহাগের চাচাতো ভাই রফিকুল ইসলাম অন্তুকে মোতাহার হোসেন মোতাই প্রথমে শর্টগান দিয়ে আঘাত করেন। পরে গুলি করেন। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেন। বর্তমানে তার মাথায় একটি গুলি রয়েছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক। এরপর রাত ৪টার দিকে পুলিশ চরতারাপুরে অভিযানে গেলে সোহাগকে ফেলে পালিয়ে যান অপহরণকারীরা। পুলিশ তাকে উদ্ধার করে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেন। এ ঘটনায় এলাকায় আতঙ্ক বিরাজ করছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চরতারাপুর ইউনিয়ন যুবদলের সাবেক এক নেতা বলেন, বিএনপির বড় বড় নেতা ও প্রশাসন রাত ৩টার দিকে আমাকে ফোন দিয়ে বিষয়টি অবগত করেন এবং উদ্ধারে কাজ করতে বলেন। এরপর কুতুব ও মুতাইকে ফোন দিয়ে বলি যে তাকে দ্রুত পরিবারের কাছে ফেরত দিয়ে আসো। তাছাড়া সমস্যা হবে কিন্তু। এরপর মোবাইলের ওপার থেকে বলে যে ১০ লাখ টাকা নিয়ে আসতে বলো তারপর ছেড়ে দিচ্ছি।
তিনি অভিযোগ করেন, এলাকায় তারা ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে। নামে বেনামে সবার থেকে চাঁদা ধরছে। ফসল ও গরু চুরি থেকে শুরু করে নানা অপরাধ করে বেড়াচ্ছে। এসব হাইব্রিডদের জন্য বিএনপির ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে।
ভুক্তভোগী সোহাগ ইসলাম বলেন, গতকাল রাত ১১টার দিকে বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে ছিলাম। এমন সময় এলাকার কুতুব কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়ে এসে আমাকে অপহরণ করে। পরে রাত ৪টার দিকে প্রশাসনের চাপের মুখে আমাকে ছেড়ে দেয়।
গুলিবিদ্ধ রফিকুল ইসলাম অন্তুর মা মোছা. মায়া খাতুন বলেন, ১০ লাখ টাকা চাঁদা চেয়েছিল। দেওয়া হয়নি এজন্য আমার ভাসুরের ছেলে সোহাগকে অপহরণ করে। আমার ছেলে এগিয়ে গেলে শর্টগান দিয়ে প্রথমে আঘাত করে। পরে গুলি করে। এখনো গুলি মাথার ভেতরে আছে। ডাক্তার অপারেশন করে বের করার কথা বলেছেন। আমরা প্রশাসনের কাছে সুষ্ঠু তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাই।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে সুজানগর পৌর বিএনপির সাবেক সদস্য সচিব জসিম বিশ্বাসকে ফোন পাওয়া যায়নি। তবে সুজানগর উপজেলা বিএনপির সাবেক সদস্য সচিব শেখ আব্দুর রউফ বলেন, সে (কুতুব) ৫ আগস্টের আগে আমার সঙ্গে চলত ও রাজনীতি করত। এরপর এখন তার সঙ্গে কোনো যোগাযোগ নেই।
পাবনা সদর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুস সালাম বলেন, অপহরণের ঘটনা জানতে পেরে আমরা রাতে ওই এলাকায় অভিযানে যাই। পরে চাপের মুখে তাকে ফেরত দেয়। তবে অভিযুক্তদের আটক করা সম্ভব হয়নি। থানায় লিখিত অভিযোগ দিলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। একজনের মাথায় গুলির ঘটনা পুলিশ তদন্ত করছে।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Liton Bin Islam

জনপ্রিয় সংবাদ

‘মুক্তিযুদ্ধে গণহত্যায় সহযোগীদের রাজনৈতিক অবস্থান স্পষ্ট করতে হবে’

error:

কলেজছাত্রকে অপহরণ করে ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি যুবদল নেতার

আপডেট সময় ০৯:২৮:০০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৪ জানুয়ারী ২০২৫

পাবনা সদরের চরতারাপুরে সোহাগ ইসলাম (২৫) নামে একজন কলেজছাত্রকে শরীরে শর্টগান ঠেকিয়ে অপহরণ করে মুক্তিপণ হিসেবে ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবির অভিযোগ উঠেছে এক যুবদল নেতার বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী সোহাগের চাচাতো ভাই গুলিবিদ্ধ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

গতকাল সোমবার (১৩ জানুয়ারি) রাত ১১টার দিকে চরতারাপুর ইউনিয়নের শুকচোর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। অপহরণের ৫ ঘণ্টা পর রাত ৪টার দিকে তাকে উদ্ধার করে পুলিশ।
অপহৃত সোহাগ চরতারাপুর ইউনিয়নের শুকচর গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য তোফাজ্জল হোসেন তোফাই মেম্বারের ছেলে। তিনি পাবনা সরকারি এডওয়ার্ড কলেজ থেকে অনার্স শেষ করে ঢাকায় চাকরির প্রস্তুতি নিচ্ছেন। আর গুলিবিদ্ধ রফিকুল ইসলাম অন্তু একই গ্রামের মোফাজ্জল প্রামানিকের ছেলে। তিনিও সরকারি এডওয়ার্ড কলেজে পড়াশোনা করেন।

অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, ইউনিয়নের শুকচোর গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য তোফাজ্জল হোসেন তোফাই দীর্ঘদিন ধরে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে শয্যাশায়ী অবস্থায় মানবেতর জীবনযাপন করছেন। ঢাকায় চিকিৎসার জন্য জমি বিক্রি করে বাড়িতে টাকা রেখেছিলেন। দু-একদিনের মধ্যে ঢাকায় নেওয়ার কথা ছিল। গতকাল রাত ১১টার পর বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন তার ছেলে সোহাগ। এ সময় সন্ত্রাসীরা এসে প্রথমে ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে শরীরে শর্টগান ঠেকিয়ে তাকে বাড়ি থেকে জোরপূর্বক অপহরণ করেন ইউনিয়ন যুবদলের প্রচার সম্পাদক কুতুব উদ্দিন, বিএনপি নেতা পরিচয় দেওয়া মুতাহার হোসেন মোতাই ও রেজাউল করিম।

তাদের বাধা দিতে গেলে সোহাগের চাচাতো ভাই রফিকুল ইসলাম অন্তুকে মোতাহার হোসেন মোতাই প্রথমে শর্টগান দিয়ে আঘাত করেন। পরে গুলি করেন। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেন। বর্তমানে তার মাথায় একটি গুলি রয়েছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক। এরপর রাত ৪টার দিকে পুলিশ চরতারাপুরে অভিযানে গেলে সোহাগকে ফেলে পালিয়ে যান অপহরণকারীরা। পুলিশ তাকে উদ্ধার করে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেন। এ ঘটনায় এলাকায় আতঙ্ক বিরাজ করছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চরতারাপুর ইউনিয়ন যুবদলের সাবেক এক নেতা বলেন, বিএনপির বড় বড় নেতা ও প্রশাসন রাত ৩টার দিকে আমাকে ফোন দিয়ে বিষয়টি অবগত করেন এবং উদ্ধারে কাজ করতে বলেন। এরপর কুতুব ও মুতাইকে ফোন দিয়ে বলি যে তাকে দ্রুত পরিবারের কাছে ফেরত দিয়ে আসো। তাছাড়া সমস্যা হবে কিন্তু। এরপর মোবাইলের ওপার থেকে বলে যে ১০ লাখ টাকা নিয়ে আসতে বলো তারপর ছেড়ে দিচ্ছি।
তিনি অভিযোগ করেন, এলাকায় তারা ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে। নামে বেনামে সবার থেকে চাঁদা ধরছে। ফসল ও গরু চুরি থেকে শুরু করে নানা অপরাধ করে বেড়াচ্ছে। এসব হাইব্রিডদের জন্য বিএনপির ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে।
ভুক্তভোগী সোহাগ ইসলাম বলেন, গতকাল রাত ১১টার দিকে বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে ছিলাম। এমন সময় এলাকার কুতুব কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়ে এসে আমাকে অপহরণ করে। পরে রাত ৪টার দিকে প্রশাসনের চাপের মুখে আমাকে ছেড়ে দেয়।
গুলিবিদ্ধ রফিকুল ইসলাম অন্তুর মা মোছা. মায়া খাতুন বলেন, ১০ লাখ টাকা চাঁদা চেয়েছিল। দেওয়া হয়নি এজন্য আমার ভাসুরের ছেলে সোহাগকে অপহরণ করে। আমার ছেলে এগিয়ে গেলে শর্টগান দিয়ে প্রথমে আঘাত করে। পরে গুলি করে। এখনো গুলি মাথার ভেতরে আছে। ডাক্তার অপারেশন করে বের করার কথা বলেছেন। আমরা প্রশাসনের কাছে সুষ্ঠু তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাই।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে সুজানগর পৌর বিএনপির সাবেক সদস্য সচিব জসিম বিশ্বাসকে ফোন পাওয়া যায়নি। তবে সুজানগর উপজেলা বিএনপির সাবেক সদস্য সচিব শেখ আব্দুর রউফ বলেন, সে (কুতুব) ৫ আগস্টের আগে আমার সঙ্গে চলত ও রাজনীতি করত। এরপর এখন তার সঙ্গে কোনো যোগাযোগ নেই।
পাবনা সদর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুস সালাম বলেন, অপহরণের ঘটনা জানতে পেরে আমরা রাতে ওই এলাকায় অভিযানে যাই। পরে চাপের মুখে তাকে ফেরত দেয়। তবে অভিযুক্তদের আটক করা সম্ভব হয়নি। থানায় লিখিত অভিযোগ দিলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। একজনের মাথায় গুলির ঘটনা পুলিশ তদন্ত করছে।