ঢাকা ০৮:০৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২০ মে ২০২৫, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
Logo মাধবপুরে দুনীর্তি প্রতিরোধ কমিটির বির্তক প্রতিযোগিতা অনুষ্টিত Logo হবিগঞ্জে ভাবী ও ভাতিজিসহ তিনজনকে ছুরিকাঘাতে হত্যাকারীর মৃত্যুদণ্ড Logo নুসরাত ফারিয়ার জামিন মঞ্জুর Logo বানিয়াচংয়ে পূবালী ব্যাংকের ইসলামী কর্নার উদ্বোধন Logo বনের শত্রু স’মিল চক্র: মাধবপুরে পরিবেশ ধ্বংসের নেপথ্যে ৪৭ অবৈধ মিল Logo ব‍্যবসায়ীকে প্রাণনাশের হুমকি ও চাঁদাবাজি,লাখাইয়ে যুবদেলর নেতা হাবিব মিয়ার বিরুদ্ধে মামলা Logo বাহুবলে বাস-ট্রাক সংঘর্ষে আহত ৫, গুরুতর আহত ট্রাকচালক সিলেটে রেফার Logo সরকারি সহায়তা না পেয়ে প্রবাসী ও তরুণদের নিজ উদ্যোগে কালভার্ট নির্মাণ Logo বরখাস্ত/অব্যাহতি প্রাপ্ত সাবেক সেনাসদস্যদের বিক্ষোভ ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অবস্থান Logo চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন প্রচার বিমুখ বরেণ্য আলেম মাওলানা আহমদ আব্দুল্লাহ চৌধুরী
তেলিয়াপড়ায় মুক্তিযুদ্ধের সূচনা করেন ওসমানী ১০ এপ্রিল এখানে মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণাপত্র পাঠ করার কথা ছিল

আজ ঐতিহাসিক তেলিয়াপাড়া দিবস

হামিদুর রহমান,মাধবপুর(হবিগঞ্জ)
ঐতিহাসিক তেলিয়াপাড়া দিবস আজ(৪ এপ্রিল)। ১৯৭১ সালের এ দিনে হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার তেলিয়াপাড়া চা বাগান বাংলোতে মহান মুক্তিযুদ্ধের সূচনা হয়। বিদ্রোহী সেনা কর্মকর্তাদের নিয়ে এখানে দুদফায় বৈঠক করেন মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক তৎকালীন কর্নেল এমএজি ওসমানী। প্রথম বৈঠকেই তিনি নিজের পিস্তল থেকে গুলি ছুড়ে মুক্তিযুদ্ধের সূচনা করেন। এখান থেকেই ১০ এপ্রিল মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণাপত্রটিও পাঠ করার কথা ছিল। কিন্তু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাগিনা ভারতে অবস্থানরত শেখ মণিসহ কয়েকজন প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতার বাগড়ায় তা আর হয়নি। ঐতিহাসিক এ স্থানটি এখনো চরম অবহেলায় পড়ে আছে। দিনে দিনে বিকৃত করা হয়েছে এর ইতিহাসও। মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দেওয়া নিয়ে আওয়ামী লীগের বানোয়াট কাহিনি ফাঁস হয়ে যাওয়ার আশঙ্কায়ই অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে ইতিহাস বিকৃতি করা হয়েছে বলে মনে করেন মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধ গবেষকরা।

এ বিষয়ে মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক কর্নেল এমএজি ওসমানীর শিষ্য বীর মুক্তিযোদ্ধা কাজী গোলাম মোর্তজা বলেন, ওসমানীর সভাপতিত্বে ৪ এপ্রিল তেলিয়াপাড়া চা বাগান বাংলোতে তৎকালীন মেজর জিয়াউর রহমান, মেজর খালেদ মোশাররফ, মেজর কেএম শফিউল্লাহসহ দেশবরেণ্য সেনা কর্মকর্তারা মুক্তিযুদ্ধ শুরুর লক্ষ্যে বৈঠকে বসেন। এখান থেকেই মুক্তিযুদ্ধের ১১টি সেক্টর ও ৩টি ব্রিগেডে ভাগ করা হয়। কর্নেল ওসমানী সভা শেষে নিজের পিস্তল থেকে গুলি ছুড়ে মুক্তিযুদ্ধের সূচনা করেন। কাজী গোলাম মোর্তজা বলেন, বিগত দিনে মুক্তিযুদ্ধের এই ইতিহাস হাইজ্যাক করা হয়েছে। আওয়ামী লীগের দুর্বৃত্তরা ইতিহাস বিকৃত করেছে। তেলিয়াপাড়াই মূলত মুজিবনগর নামকরণ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এতে ওসমানী সামনে চলে আসবেন বিধায় তা হয়নি। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এখন ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার কারণে মুখ দেখাতে পারি না।

ওসমানীর এ শিষ্য বলেন, অস্ট্রেলিয়ায় পলাতক আওয়ামী লীগ নেতা সেনাবাহিনী থেকে চাকরিচ্যুত কবির উদ্দিন নিজেকে ক্যাপ্টেন বলেই প্রতিষ্ঠিত করেছে। তিনি আওয়ামী লীগকে প্রতিষ্ঠিত করতে তেলিয়াপাড়া নিয়ে বিগত দিনগুলোয় ভুয়া ইতিহাস ছড়িয়েছেন। বিভিন্ন গণমাধ্যম বিকৃত ইতিহাস ছেপেছে। আর ইতিহাস বিকৃতির পুরস্কার হিসাবে তিনি কোটি কোটি টাকা লুটপাট করার সুযোগ পেয়েছেন। সেই টাকায় অস্ট্রেলিয়ায় সম্পদের পাহাড় গড়েছেন। তিনি একজন ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা।

কাজী গোলাম মোর্তজা বলেন, আমি ওসমানীর প্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়েই মূলত মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিই। আমি তার সরাসরি শিষ্য হওয়ার সুযোগ পেয়েছি। তার চড় খেয়েছি, ট্রেনিংয়ে ভুল করে তার মার খেয়েছি।

মুক্তিযুদ্ধ গবেষক সাইদুর রহমান বলেন, ১৭ এপ্রিল মেহেরপুরে যে ঘোষণাপত্র পাঠ করা হয়েছে, তা ১০ এপ্রিল তেলিয়াপাড়ায় পাঠ করার কথা ছিল। তাজউদ্দীন আহমদ এ ঘোষণাপত্র পাঠ করার কথা ছিল। কিন্তু তাতে বাধা দেন আওয়ামী লীগ নেতারা। কলকাতায় শেখ মণিসহ আওয়ামী লীগ নেতারা তাজউদ্দীন আহমদের সঙ্গে অসদাচরণ করেন। শেষে তিনি আগরতলা থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা বলে পরিস্থিতি শান্ত করেন। এদিকে ঘোষণাপত্রটি আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়ে পড়ে। অপরদিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পাকবাহিনী জঙ্গিবিমান থেকে বোমা নিক্ষেপ করতে থাকে। শেষ পর্যন্ত কর্নেল এমএজি ওসমানী ঝুঁকি এড়াতে এখান থেকে ঘোষণাপত্র পাঠ না করার জন্য বলেন। এ মুক্তিযুদ্ধ গবেষক বলেন, মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে মোট ৩টি সভা হয়েছে। এর মধ্যে ২টি সভাই হয় তেলিয়াপাড়ায়। প্রথমটি ৪ এপ্রিল এবং দ্বিতীয়টি ১০ এপ্রিল। এটিই মুক্তিযুদ্ধকালীন প্রথম সেনা সদর দপ্তর ছিল। এসব সভায় কোনো রাজনৈতিক নেতৃত্ব কিংবা সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণ ছিল না। এটি শুধুই সেনাবাহিনীর কর্মকর্তাদের সভা ছিল। তিনি বলেন, একটি মিথ্যা তথ্য বিগত দিনে প্রচার করা হয়েছে যে, জিয়াউর রহমান সেখানে উপস্থিত ছিলেন না। আওয়ামী লীগের নিয়োজিত লোক এমন মিথ্যা তথ্য ছড়িয়েছে। প্রকৃতপক্ষে জিয়াউর রহমান ৩ এপ্রিল চট্টগ্রাম থেকে ভারত হয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া হয়ে তেলিয়াপাড়ায় আসেন। তিনি দুটি মিটিংয়েই উপস্থিত ছিলেন। তাকে দুটি কোম্পানির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। অথচ তার রসদ ছিল অত্যন্ত সীমিত। আওয়ামী লীগের মন্ত্রী মোস্তফা শহীদ, কবির উদ্দিনের মতো লোকরা ভুয়া ইতিহাস তৈরি করেছে।

গবেষক সাইদুর বলেন, তেলিয়াপাড়া নিয়ে আরও একটি ভুয়া তথ্য হলো এই চা বাগানের তৎকালীন ম্যানেজার নাকি পাকিস্তানিদের কাছে মুক্তিযোদ্ধাদের তথ্য পাচার করতেন। এটি সম্পূর্ণ মিথ্যা তথ্য। প্রকৃতপক্ষে জগদীশপুর চা বাগানের ম্যানেজার ছিলেন পাকিস্তানি। তিনি এসব তথ্য পাচার করতেন। তিনি জনতার হাতে ধরা পড়ে শেষ পর্যন্ত গণপিটুনিতে মারা যান। পরে তেলিয়াপাড়ার ম্যানেজারকেও জনতা সন্দেহজনক হিসাবে আটক করে মেজর শফিউল্লহর কাছে হস্তান্তর করে। এ খবর পেয়ে মাধবপুর থেকে একজন মুক্তিযোদ্ধা গিয়ে তার সহযোগিতার বিষয়টি জানালে তাকে নিরাপদে ভারতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। তিনি বলেন, আসলে মুক্তিযুদ্ধে তেলিয়াপাড়ার প্রকৃত ইতিহাস মানুষকে জানানো প্রয়োজন। এখানে একটি মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর করা যেতে পারে। যেখানে তেলিয়াপাড়ার প্রকৃত ইতিহাস সংরক্ষিত থাকবে।

মাধবপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার জাহিদ বিন কাশেম দিবসটি পালন সম্পর্কে বলেন, আমি এখানে নতুন এসেছি। কীভাবে দিবসটি পালিত হয় খবর নিয়ে দেখব।

অনুসন্ধানে জানা যায়, বিএসএফ-এর পূর্বাঞ্চলীয় অধিনায়ক ব্রিগেডিয়ার ভি সি পান্ডের সহযোগিতায় বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে থাকা বিদ্রোহী সেনা কর্মকর্তা এবং ভারতীয় সরকারের প্রতিনিধির সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। প্রথমে তেলিয়াপাড়া আসেন ৪র্থ ইস্ট বেঙ্গলের অধিনায়ক মেজর খালেদ মোশাররফ। এরপর ১ এপ্রিল আসেন ২য় ইস্ট বেঙ্গলের অধিনায়ক মেজর কেএম সফিউল্লাহ। তারা তেলিয়াপাড়ায় ৪র্থ বেঙ্গলের সঙ্গে যৌথভাবে সদর দপ্তর স্থাপন করেন। ৩ এপ্রিল ভারতের রামগর হয়ে আসেন ৮ম ইস্ট বেঙ্গলের অধিনায়ক মেজর জিয়াউর রহমান। ৪ এপ্রিল সকালের মধ্যে সেনা কর্মকর্তাদের সবাই তেলিয়াপাড়া বাংলোতে উপস্থিত হন। এদিন বেলা ১১টায় এমএজি ওসমানীর সভাপতিত্বে সর্বসম্মতিক্রমে বেঙ্গল রেজিমেন্টের প্রতিষ্ঠাতা ওসমানীকে সমন্বয় সাধনের দায়িত্ব দেওয়া হয়। উপস্থিত বিদ্রোহী সেনা কর্মকর্তারা দেশকে ৪টি সামরিক অঞ্চলে বিভক্ত করে প্রতিটি অঞ্চলে সশস্ত্র বিদ্রোহ চালিয়ে যাওয়ার জন্য ১ জন করে সেনা কর্মকর্তা নির্বাচিত করেন। বৃহত্তর চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম ও নোয়াখালী জেলার পূর্বাঞ্চল নিয়ে গঠিত অঞ্চলের দায়িত্ব দেওয়া হয় মেজর জিয়াউর রহমানকে। বৃহত্তর কুমিল্লা, ঢাকা ও নোয়াখালী জেলার পশ্চিমাঞ্চলে সশস্ত্র প্রতিরোধযুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব দেওয়া হয় মেজর খালেদ মোশাররফকে। বৃহত্তর সিলেট এবং ময়মনসিংহ জেলার পূর্বাঞ্চলে দায়িত্ব দেওয়া হয় মেজর কেএম সফিউল্লাহকে। বৃহত্তর কুষ্টিয়া, যশোর ও ফরিদপুর জেলা নিয়ে গঠিত অঞ্চলের দায়িত্ব দেওয়া হয় মেজর আবু ওসমান চৌধুরীকে

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Liton Bin Islam

জনপ্রিয় সংবাদ

মাধবপুরে দুনীর্তি প্রতিরোধ কমিটির বির্তক প্রতিযোগিতা অনুষ্টিত

error:

তেলিয়াপড়ায় মুক্তিযুদ্ধের সূচনা করেন ওসমানী ১০ এপ্রিল এখানে মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণাপত্র পাঠ করার কথা ছিল

আজ ঐতিহাসিক তেলিয়াপাড়া দিবস

আপডেট সময় ০১:৩৬:৫২ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৪ এপ্রিল ২০২৫

হামিদুর রহমান,মাধবপুর(হবিগঞ্জ)
ঐতিহাসিক তেলিয়াপাড়া দিবস আজ(৪ এপ্রিল)। ১৯৭১ সালের এ দিনে হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার তেলিয়াপাড়া চা বাগান বাংলোতে মহান মুক্তিযুদ্ধের সূচনা হয়। বিদ্রোহী সেনা কর্মকর্তাদের নিয়ে এখানে দুদফায় বৈঠক করেন মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক তৎকালীন কর্নেল এমএজি ওসমানী। প্রথম বৈঠকেই তিনি নিজের পিস্তল থেকে গুলি ছুড়ে মুক্তিযুদ্ধের সূচনা করেন। এখান থেকেই ১০ এপ্রিল মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণাপত্রটিও পাঠ করার কথা ছিল। কিন্তু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাগিনা ভারতে অবস্থানরত শেখ মণিসহ কয়েকজন প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতার বাগড়ায় তা আর হয়নি। ঐতিহাসিক এ স্থানটি এখনো চরম অবহেলায় পড়ে আছে। দিনে দিনে বিকৃত করা হয়েছে এর ইতিহাসও। মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দেওয়া নিয়ে আওয়ামী লীগের বানোয়াট কাহিনি ফাঁস হয়ে যাওয়ার আশঙ্কায়ই অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে ইতিহাস বিকৃতি করা হয়েছে বলে মনে করেন মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধ গবেষকরা।

এ বিষয়ে মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক কর্নেল এমএজি ওসমানীর শিষ্য বীর মুক্তিযোদ্ধা কাজী গোলাম মোর্তজা বলেন, ওসমানীর সভাপতিত্বে ৪ এপ্রিল তেলিয়াপাড়া চা বাগান বাংলোতে তৎকালীন মেজর জিয়াউর রহমান, মেজর খালেদ মোশাররফ, মেজর কেএম শফিউল্লাহসহ দেশবরেণ্য সেনা কর্মকর্তারা মুক্তিযুদ্ধ শুরুর লক্ষ্যে বৈঠকে বসেন। এখান থেকেই মুক্তিযুদ্ধের ১১টি সেক্টর ও ৩টি ব্রিগেডে ভাগ করা হয়। কর্নেল ওসমানী সভা শেষে নিজের পিস্তল থেকে গুলি ছুড়ে মুক্তিযুদ্ধের সূচনা করেন। কাজী গোলাম মোর্তজা বলেন, বিগত দিনে মুক্তিযুদ্ধের এই ইতিহাস হাইজ্যাক করা হয়েছে। আওয়ামী লীগের দুর্বৃত্তরা ইতিহাস বিকৃত করেছে। তেলিয়াপাড়াই মূলত মুজিবনগর নামকরণ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এতে ওসমানী সামনে চলে আসবেন বিধায় তা হয়নি। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এখন ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার কারণে মুখ দেখাতে পারি না।

ওসমানীর এ শিষ্য বলেন, অস্ট্রেলিয়ায় পলাতক আওয়ামী লীগ নেতা সেনাবাহিনী থেকে চাকরিচ্যুত কবির উদ্দিন নিজেকে ক্যাপ্টেন বলেই প্রতিষ্ঠিত করেছে। তিনি আওয়ামী লীগকে প্রতিষ্ঠিত করতে তেলিয়াপাড়া নিয়ে বিগত দিনগুলোয় ভুয়া ইতিহাস ছড়িয়েছেন। বিভিন্ন গণমাধ্যম বিকৃত ইতিহাস ছেপেছে। আর ইতিহাস বিকৃতির পুরস্কার হিসাবে তিনি কোটি কোটি টাকা লুটপাট করার সুযোগ পেয়েছেন। সেই টাকায় অস্ট্রেলিয়ায় সম্পদের পাহাড় গড়েছেন। তিনি একজন ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা।

কাজী গোলাম মোর্তজা বলেন, আমি ওসমানীর প্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়েই মূলত মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিই। আমি তার সরাসরি শিষ্য হওয়ার সুযোগ পেয়েছি। তার চড় খেয়েছি, ট্রেনিংয়ে ভুল করে তার মার খেয়েছি।

মুক্তিযুদ্ধ গবেষক সাইদুর রহমান বলেন, ১৭ এপ্রিল মেহেরপুরে যে ঘোষণাপত্র পাঠ করা হয়েছে, তা ১০ এপ্রিল তেলিয়াপাড়ায় পাঠ করার কথা ছিল। তাজউদ্দীন আহমদ এ ঘোষণাপত্র পাঠ করার কথা ছিল। কিন্তু তাতে বাধা দেন আওয়ামী লীগ নেতারা। কলকাতায় শেখ মণিসহ আওয়ামী লীগ নেতারা তাজউদ্দীন আহমদের সঙ্গে অসদাচরণ করেন। শেষে তিনি আগরতলা থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা বলে পরিস্থিতি শান্ত করেন। এদিকে ঘোষণাপত্রটি আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়ে পড়ে। অপরদিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পাকবাহিনী জঙ্গিবিমান থেকে বোমা নিক্ষেপ করতে থাকে। শেষ পর্যন্ত কর্নেল এমএজি ওসমানী ঝুঁকি এড়াতে এখান থেকে ঘোষণাপত্র পাঠ না করার জন্য বলেন। এ মুক্তিযুদ্ধ গবেষক বলেন, মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে মোট ৩টি সভা হয়েছে। এর মধ্যে ২টি সভাই হয় তেলিয়াপাড়ায়। প্রথমটি ৪ এপ্রিল এবং দ্বিতীয়টি ১০ এপ্রিল। এটিই মুক্তিযুদ্ধকালীন প্রথম সেনা সদর দপ্তর ছিল। এসব সভায় কোনো রাজনৈতিক নেতৃত্ব কিংবা সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণ ছিল না। এটি শুধুই সেনাবাহিনীর কর্মকর্তাদের সভা ছিল। তিনি বলেন, একটি মিথ্যা তথ্য বিগত দিনে প্রচার করা হয়েছে যে, জিয়াউর রহমান সেখানে উপস্থিত ছিলেন না। আওয়ামী লীগের নিয়োজিত লোক এমন মিথ্যা তথ্য ছড়িয়েছে। প্রকৃতপক্ষে জিয়াউর রহমান ৩ এপ্রিল চট্টগ্রাম থেকে ভারত হয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া হয়ে তেলিয়াপাড়ায় আসেন। তিনি দুটি মিটিংয়েই উপস্থিত ছিলেন। তাকে দুটি কোম্পানির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। অথচ তার রসদ ছিল অত্যন্ত সীমিত। আওয়ামী লীগের মন্ত্রী মোস্তফা শহীদ, কবির উদ্দিনের মতো লোকরা ভুয়া ইতিহাস তৈরি করেছে।

গবেষক সাইদুর বলেন, তেলিয়াপাড়া নিয়ে আরও একটি ভুয়া তথ্য হলো এই চা বাগানের তৎকালীন ম্যানেজার নাকি পাকিস্তানিদের কাছে মুক্তিযোদ্ধাদের তথ্য পাচার করতেন। এটি সম্পূর্ণ মিথ্যা তথ্য। প্রকৃতপক্ষে জগদীশপুর চা বাগানের ম্যানেজার ছিলেন পাকিস্তানি। তিনি এসব তথ্য পাচার করতেন। তিনি জনতার হাতে ধরা পড়ে শেষ পর্যন্ত গণপিটুনিতে মারা যান। পরে তেলিয়াপাড়ার ম্যানেজারকেও জনতা সন্দেহজনক হিসাবে আটক করে মেজর শফিউল্লহর কাছে হস্তান্তর করে। এ খবর পেয়ে মাধবপুর থেকে একজন মুক্তিযোদ্ধা গিয়ে তার সহযোগিতার বিষয়টি জানালে তাকে নিরাপদে ভারতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। তিনি বলেন, আসলে মুক্তিযুদ্ধে তেলিয়াপাড়ার প্রকৃত ইতিহাস মানুষকে জানানো প্রয়োজন। এখানে একটি মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর করা যেতে পারে। যেখানে তেলিয়াপাড়ার প্রকৃত ইতিহাস সংরক্ষিত থাকবে।

মাধবপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার জাহিদ বিন কাশেম দিবসটি পালন সম্পর্কে বলেন, আমি এখানে নতুন এসেছি। কীভাবে দিবসটি পালিত হয় খবর নিয়ে দেখব।

অনুসন্ধানে জানা যায়, বিএসএফ-এর পূর্বাঞ্চলীয় অধিনায়ক ব্রিগেডিয়ার ভি সি পান্ডের সহযোগিতায় বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে থাকা বিদ্রোহী সেনা কর্মকর্তা এবং ভারতীয় সরকারের প্রতিনিধির সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। প্রথমে তেলিয়াপাড়া আসেন ৪র্থ ইস্ট বেঙ্গলের অধিনায়ক মেজর খালেদ মোশাররফ। এরপর ১ এপ্রিল আসেন ২য় ইস্ট বেঙ্গলের অধিনায়ক মেজর কেএম সফিউল্লাহ। তারা তেলিয়াপাড়ায় ৪র্থ বেঙ্গলের সঙ্গে যৌথভাবে সদর দপ্তর স্থাপন করেন। ৩ এপ্রিল ভারতের রামগর হয়ে আসেন ৮ম ইস্ট বেঙ্গলের অধিনায়ক মেজর জিয়াউর রহমান। ৪ এপ্রিল সকালের মধ্যে সেনা কর্মকর্তাদের সবাই তেলিয়াপাড়া বাংলোতে উপস্থিত হন। এদিন বেলা ১১টায় এমএজি ওসমানীর সভাপতিত্বে সর্বসম্মতিক্রমে বেঙ্গল রেজিমেন্টের প্রতিষ্ঠাতা ওসমানীকে সমন্বয় সাধনের দায়িত্ব দেওয়া হয়। উপস্থিত বিদ্রোহী সেনা কর্মকর্তারা দেশকে ৪টি সামরিক অঞ্চলে বিভক্ত করে প্রতিটি অঞ্চলে সশস্ত্র বিদ্রোহ চালিয়ে যাওয়ার জন্য ১ জন করে সেনা কর্মকর্তা নির্বাচিত করেন। বৃহত্তর চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম ও নোয়াখালী জেলার পূর্বাঞ্চল নিয়ে গঠিত অঞ্চলের দায়িত্ব দেওয়া হয় মেজর জিয়াউর রহমানকে। বৃহত্তর কুমিল্লা, ঢাকা ও নোয়াখালী জেলার পশ্চিমাঞ্চলে সশস্ত্র প্রতিরোধযুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব দেওয়া হয় মেজর খালেদ মোশাররফকে। বৃহত্তর সিলেট এবং ময়মনসিংহ জেলার পূর্বাঞ্চলে দায়িত্ব দেওয়া হয় মেজর কেএম সফিউল্লাহকে। বৃহত্তর কুষ্টিয়া, যশোর ও ফরিদপুর জেলা নিয়ে গঠিত অঞ্চলের দায়িত্ব দেওয়া হয় মেজর আবু ওসমান চৌধুরীকে