ঢাকা ০৭:৩২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২৫ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
Logo নেপালের প্রধানমন্ত্রী অলি পদত্যাগ, দেশ ছাড়ার গুঞ্জন Logo কুড়িগ্রামের সাংবাদিক নির্যাতন মামলায় হাইকোর্ট থেকে জামিন পেলেন সাবেক ডিসি সুলতানা Logo ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেলের জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী বিএনপি Logo নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী বাছাইয়ে নতুন প্রক্রিয়া নেবে বিএনপি Logo মাধবপুরে অবৈধ বালু উত্তোলনে ২ জনকে জরিমানা Logo ঐতিহাসিক তেলিয়াপাড়া বাংলো সংরক্ষণে সরকারের উদ্যোগ, শ্রমিকদের আপত্তি Logo সার পাচারের অভিযোগে লাখাইয়ের কৃষি কর্মকর্তা জ্যোতিলাল গোপের পদাবনতি Logo নিশানের চেয়ারম্যান বেলালসহ কর্মকর্তা গোবিন্দ গ্রেপ্তার Logo মাধবপুরে বিয়ের দাবিতে প্রেমিকের বাড়িতে তরুণীর অনশন Logo বাহুবলে কূপে গ্যাসের সন্ধান, সম্ভাব্য মূল্য ৪৭০০ কোটি টাকা

ঐতিহাসিক তেলিয়াপাড়া বাংলো সংরক্ষণে সরকারের উদ্যোগ, শ্রমিকদের আপত্তি

Oplus_16908288

বাংলার খবর ডেস্ক: হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার তেলিয়াপাড়া চা-বাগানের ঐতিহাসিক বাংলোটি সংরক্ষণ করে জাদুঘরে রূপ দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। মুক্তিযুদ্ধের সময় এ বাংলোতেই গড়ে উঠেছিল প্রথম সেনা সদর দপ্তর। তবে পরিকল্পনাটিকে ঘিরে দেখা দিয়েছে বিতর্ক। চা-বাগানের শ্রমিকেরা বলছেন, বাংলোর লিজ বাতিল হলে তাঁদের কাজ ও জীবিকা অনিশ্চিত হয়ে পড়বে।

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্প্রতি হবিগঞ্জ জেলা প্রশাসককে চিঠি দিয়ে ন্যাশনাল টি কোম্পানির (এনটিসি) অধীনে থাকা বাংলো ও সংশ্লিষ্ট জমির লিজ বাতিলের নির্দেশ দিয়েছে। বর্তমানে এ জমি ২০৩৭ সাল পর্যন্ত দীর্ঘমেয়াদি বন্দোবস্তে এনটিসির অধীনে রয়েছে। তবে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বিকল্প স্থানে এনটিসির জন্য নতুন স্থাপনা তৈরি করে দেওয়া হবে।

<img src="https://banglarkhabor24.com/wp-content/uploads/2025/09/IMG_20250909_095005.jpg" alt="" width="100%" height="Auto" class="size-full wp-image-7686"

ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ এ বাংলোতেই ১৯৭১ সালের ৪ এপ্রিল মুক্তিযুদ্ধের প্রথম গোপন বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে কর্নেল (অব.) এম এ জি ওসমানীর নেতৃত্বে ২৭ জন সেনা কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন। এখানেই দেশকে ১১টি সেক্টরে ভাগ করার সিদ্ধান্ত হয়, গঠিত হয় জেড ফোর্সসহ একাধিক ফোর্স, এবং স্বাধীনতার যুদ্ধ পরিচালনার জন্য প্রাথমিক নকশা প্রণয়ন করা হয়। এ কারণেই দিনটিকে প্রতি বছর “তেলিয়াপাড়া দিবস” হিসেবে পালন করা হয়।

তবে শ্রমিকদের দাবি, বাংলোটি সংরক্ষণের নামে লিজ বাতিল হলে তাঁদের জীবিকা হুমকির মুখে পড়বে। পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি খোকন তাঁতী বলেন, বাংলোর পাশে অনেকগুলো নার্সারি রয়েছে যেখান থেকে চা-বাগানে গাছ সরবরাহ করা হয়। এটি সরিয়ে দিলে বাগান ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং শ্রমিকেরা কাজ হারাবেন। একইভাবে চা-বাগান পূজা উদ্‌যাপন কমিটির সভাপতি সারজিত পাশি আশঙ্কা প্রকাশ করেন, এ এলাকায় জাদুঘর হলে বাইরের লোকজন ভিড় করবে, এতে শান্ত পরিবেশ নষ্ট হয়ে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড বেড়ে যাবে।

অন্যদিকে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতি অ্যান্ড রিসার্চ ফাউন্ডেশনের সভাপতি কর্নেল (অব.) মোহাম্মদ আবদুস সালাম মনে করেন, তেলিয়াপাড়ার ঐতিহাসিক বাংলো সংরক্ষণ করা না গেলে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের মূল্যবান স্মৃতি হারিয়ে যাবে। তাঁর মতে, মুক্তিযুদ্ধের প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে ইতিহাস ছড়িয়ে দিতে এ বাংলো সংরক্ষণ করা অপরিহার্য।

সরকারের পক্ষ থেকেও একই অবস্থান জানানো হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব ইসরাত চৌধুরী বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত এ বাংলো সংরক্ষণ করে জাদুঘর নির্মাণ করা হবে। দর্শনার্থীরা যাতে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানতে পারেন, সে জন্যই এ উদ্যোগ। এনটিসিকে বিকল্প স্থাপনা নির্মাণ করে দেওয়ার বিষয়েও আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।

তবে প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে, দীর্ঘদিন ধরে বারবার উদ্যোগ নেওয়া হলেও কেন এখনও বাংলোটিকে জাদুঘরে রূপ দেওয়া সম্ভব হয়নি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রাজনৈতিক অনীহাই এর প্রধান কারণ। মুক্তিযুদ্ধের প্রথম সেনা সদর দপ্তরকে রাষ্ট্রীয়ভাবে গৌরবান্বিত করতে রাজনীতিবিদেরা আগ্রহ দেখাননি।

ঐতিহাসিক এই বাংলো শুধু মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিই বহন করছে না, বরং তা জাতির অস্তিত্বের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। তাই ইতিহাসবিদদের মতে, যত দ্রুত সম্ভব বাংলোটি সংরক্ষণ করে জাতীয় পর্যায়ের জাদুঘরে রূপান্তর করা জরুরি।

আপলোডকারীর তথ্য

বাংলার খবর

জনপ্রিয় সংবাদ

নেপালের প্রধানমন্ত্রী অলি পদত্যাগ, দেশ ছাড়ার গুঞ্জন

error:

ঐতিহাসিক তেলিয়াপাড়া বাংলো সংরক্ষণে সরকারের উদ্যোগ, শ্রমিকদের আপত্তি

আপডেট সময় ১২:৫২:৫০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫

বাংলার খবর ডেস্ক: হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার তেলিয়াপাড়া চা-বাগানের ঐতিহাসিক বাংলোটি সংরক্ষণ করে জাদুঘরে রূপ দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। মুক্তিযুদ্ধের সময় এ বাংলোতেই গড়ে উঠেছিল প্রথম সেনা সদর দপ্তর। তবে পরিকল্পনাটিকে ঘিরে দেখা দিয়েছে বিতর্ক। চা-বাগানের শ্রমিকেরা বলছেন, বাংলোর লিজ বাতিল হলে তাঁদের কাজ ও জীবিকা অনিশ্চিত হয়ে পড়বে।

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্প্রতি হবিগঞ্জ জেলা প্রশাসককে চিঠি দিয়ে ন্যাশনাল টি কোম্পানির (এনটিসি) অধীনে থাকা বাংলো ও সংশ্লিষ্ট জমির লিজ বাতিলের নির্দেশ দিয়েছে। বর্তমানে এ জমি ২০৩৭ সাল পর্যন্ত দীর্ঘমেয়াদি বন্দোবস্তে এনটিসির অধীনে রয়েছে। তবে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বিকল্প স্থানে এনটিসির জন্য নতুন স্থাপনা তৈরি করে দেওয়া হবে।

<img src="https://banglarkhabor24.com/wp-content/uploads/2025/09/IMG_20250909_095005.jpg" alt="" width="100%" height="Auto" class="size-full wp-image-7686"

ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ এ বাংলোতেই ১৯৭১ সালের ৪ এপ্রিল মুক্তিযুদ্ধের প্রথম গোপন বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে কর্নেল (অব.) এম এ জি ওসমানীর নেতৃত্বে ২৭ জন সেনা কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন। এখানেই দেশকে ১১টি সেক্টরে ভাগ করার সিদ্ধান্ত হয়, গঠিত হয় জেড ফোর্সসহ একাধিক ফোর্স, এবং স্বাধীনতার যুদ্ধ পরিচালনার জন্য প্রাথমিক নকশা প্রণয়ন করা হয়। এ কারণেই দিনটিকে প্রতি বছর “তেলিয়াপাড়া দিবস” হিসেবে পালন করা হয়।

তবে শ্রমিকদের দাবি, বাংলোটি সংরক্ষণের নামে লিজ বাতিল হলে তাঁদের জীবিকা হুমকির মুখে পড়বে। পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি খোকন তাঁতী বলেন, বাংলোর পাশে অনেকগুলো নার্সারি রয়েছে যেখান থেকে চা-বাগানে গাছ সরবরাহ করা হয়। এটি সরিয়ে দিলে বাগান ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং শ্রমিকেরা কাজ হারাবেন। একইভাবে চা-বাগান পূজা উদ্‌যাপন কমিটির সভাপতি সারজিত পাশি আশঙ্কা প্রকাশ করেন, এ এলাকায় জাদুঘর হলে বাইরের লোকজন ভিড় করবে, এতে শান্ত পরিবেশ নষ্ট হয়ে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড বেড়ে যাবে।

অন্যদিকে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতি অ্যান্ড রিসার্চ ফাউন্ডেশনের সভাপতি কর্নেল (অব.) মোহাম্মদ আবদুস সালাম মনে করেন, তেলিয়াপাড়ার ঐতিহাসিক বাংলো সংরক্ষণ করা না গেলে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের মূল্যবান স্মৃতি হারিয়ে যাবে। তাঁর মতে, মুক্তিযুদ্ধের প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে ইতিহাস ছড়িয়ে দিতে এ বাংলো সংরক্ষণ করা অপরিহার্য।

সরকারের পক্ষ থেকেও একই অবস্থান জানানো হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব ইসরাত চৌধুরী বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত এ বাংলো সংরক্ষণ করে জাদুঘর নির্মাণ করা হবে। দর্শনার্থীরা যাতে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানতে পারেন, সে জন্যই এ উদ্যোগ। এনটিসিকে বিকল্প স্থাপনা নির্মাণ করে দেওয়ার বিষয়েও আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।

তবে প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে, দীর্ঘদিন ধরে বারবার উদ্যোগ নেওয়া হলেও কেন এখনও বাংলোটিকে জাদুঘরে রূপ দেওয়া সম্ভব হয়নি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রাজনৈতিক অনীহাই এর প্রধান কারণ। মুক্তিযুদ্ধের প্রথম সেনা সদর দপ্তরকে রাষ্ট্রীয়ভাবে গৌরবান্বিত করতে রাজনীতিবিদেরা আগ্রহ দেখাননি।

ঐতিহাসিক এই বাংলো শুধু মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিই বহন করছে না, বরং তা জাতির অস্তিত্বের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। তাই ইতিহাসবিদদের মতে, যত দ্রুত সম্ভব বাংলোটি সংরক্ষণ করে জাতীয় পর্যায়ের জাদুঘরে রূপান্তর করা জরুরি।