
বাংলার খবর প্রতিনিধি, নবীগঞ্জ
নবীগঞ্জ শহর ও আশপাশের সাতটি গ্রাম দুই দিন ধরে কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। সংঘর্ষ, অগ্নিকাণ্ড ও যৌথবাহিনীর অভিযান নিয়ে এলাকাজুড়ে তীব্র আতঙ্ক বিরাজ করছে। সোমবারের ভয়াবহ সংঘর্ষে প্রাণ হারিয়েছেন এক ব্যক্তি, আহত হয়েছেন শতাধিক। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের দাবি, এ ঘটনায় অন্তত ২০ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
নবীগঞ্জ শহর, পূর্ব ও পশ্চিম তিমিরপুর, চরগাঁও, আনমনু, রাজাবাদ, নোয়াপাড়া ও পিরিজপুরসহ আশপাশের গ্রামগুলোতে যৌথবাহিনীর কড়া টহল চলছে। পুরো শহর এখন সুনসান, সব দোকানপাট, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও যানবাহন চলাচল বন্ধ। দুই দিনে অন্তত ১৩ জনকে আটক করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তবে এখনও পর্যন্ত কোনো মামলা হয়নি। নবীগঞ্জ থানার ওসি শেখ মো. কামরুজ্জামান জানিয়েছেন, পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে থাকলেও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে টহল অব্যাহত রয়েছে।
এই সহিংসতার সূত্রপাত স্থানীয় দুই সাংবাদিক—সেলিম তালুকদার ও আশাহীদ আলী আশার মধ্যে ব্যক্তিগত বিরোধ থেকে। শুরুতে পূর্ব তিমিরপুর ও আনমনু গ্রামের লোকজন সংঘর্ষে জড়ালেও পরে তা ছড়িয়ে পড়ে আশপাশের গ্রামগুলোতে। এক পর্যায়ে সংঘর্ষ দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে রূপ নেয়, যেখানে একপক্ষে ছিলেন মৎস্যজীবী সম্প্রদায় এবং অন্যপক্ষে অমৎস্যজীবী সম্প্রদায়ের মানুষ।
সোমবার নবীগঞ্জ বাজারে কয়েক ঘণ্টাব্যাপী দফায় দফায় সংঘর্ষ, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও দাঙ্গা চলে। অমরনাথ রোডের একাধিক বেসরকারি হাসপাতাল, শতাধিক দোকান ও যানবাহন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সংঘর্ষে পূর্ব তিমিরপুর গ্রামের বাসিন্দা, পেশায় অ্যাম্বুলেন্স চালক ফারুক মিয়া (৪২) নিহত হন।
পরিস্থিতি শান্ত করতে বুধবার বিকেলে আউশকান্দি বাজার হাফিজিয়া সিনিয়র দাখিল মাদ্রাসায় এক জরুরি সালিশ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় ১৭ সদস্য বিশিষ্ট একটি সালিশ কমিটি গঠন করা হয়। আহ্বায়ক করা হয়েছে বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মনসুর আলী খানকে। যুগ্ম আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন মাওলানা আশরাফ আলী, সরফরাজ চৌধুরী ও মাওলানা ফয়ছল তালুকদার। সদস্য সচিব করা হয়েছে সৈয়দ খালেদুর রহমান খালেদকে।
সালিশ বৈঠকে পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে: উভয় পক্ষের সম্মতিতে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধান, প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে চলা, নিরীহ জনসাধারণ যেন হয়রানির শিকার না হয়, উভয় সম্প্রদায়ের মধ্যে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান বজায় রাখা এবং সংঘর্ষে নিহত ফারুক মিয়ার প্রতি শোক প্রকাশ।
সভায় উপস্থিত ছিলেন জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নেতা মো. শাহজাহান আলী, নবীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক সরফরাজ আহমেদ চৌধুরী, সাবেক চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান চৌধুরী শেফু, জামায়াত আমির মাওলানা আশরাফ আলী, কল্যাণ সমিতির সভাপতি শাহ মনসুর আলী খান, সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবুল ফজলসহ স্থানীয় রাজনৈতিক ও সামাজিক নেতৃবৃন্দ