
হবিগঞ্জের মাধবপুরে অবৈধ স’মিলগুলোর বিস্তার এখন বন ও পরিবেশের জন্য বড় হুমকি হয়ে উঠেছে।
সরকারি হিসাব অনুযায়ী, পুরো উপজেলায় মাত্র ১১টি স’মিল বৈধভাবে পরিচালিত হচ্ছে, অথচ অবৈধভাবে চালু রয়েছে অন্তত ৪৭টি স’মিল। দিনের পর দিন প্রশাসনের চোখের সামনেই গড়ে উঠছে এই কাঠ চক্র, যা বন উজাড় এবং জলবায়ু পরিবর্তনের পেছনে বড় ভূমিকা রাখছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
গাছ কাটা রাতের বেলা, কাঠ রূপ নিচ্ছে দিনে
স্থানীয়দের অভিযোগ, এসব স’মিলে প্রতিনিয়ত গোপনে সরকারি বনাঞ্চল থেকে গাছ এনে প্রসেসিং করা হচ্ছে। রাতের আঁধারে বন থেকে গাছ কেটে আনা হয়, আর দিনে চলে কাঠের বানিজ্য। অভিযোগ উঠেছে, এই চক্রের পেছনে রয়েছে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের ছায়া, যার ফলে প্রশাসনের দৃষ্টিতেও এসব মিল অনায়াসে টিকে যাচ্ছে।
প্রশাসন নিরব, প্রাকৃতিক ভারসাম্য বিপন্ন
পরিবেশবিদরা বলছেন, লাগাতার গাছ কাটার ফলে মাধবপুরের তাপমাত্রা বেড়েছে, বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কমেছে, এবং কৃষিজমি অনুর্বর হয়ে পড়ছে। হারিয়ে যাচ্ছে স্থানীয় জীববৈচিত্র্য, যা এলাকার ইকো-সিস্টেমে দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলতে পারে।
পরিবেশ বিশেষজ্ঞ ড. আবিদ মালিক বলেন, “এভাবে চলতে থাকলে শুধু মাধবপুর নয়, আশপাশের অঞ্চলও পরিবেশগত বিপর্যয়ের মুখে পড়বে। এখনই ব্যবস্থা না নিলে ভবিষ্যতে এই ক্ষতি পূরণ করা অসম্ভব হয়ে পড়বে।”
অভিযানের আগে খবর, রক্ষা পায় স’মিল
বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বিভিন্ন সময় অভিযানের উদ্যোগ নেওয়া হলেও, ফলাফল প্রায় শূন্য। অভিযান শুরুর আগেই খবর পৌঁছে যায় সংশ্লিষ্টদের কাছে। ফলে স’মিল বন্ধ করে দেওয়া হয় বা কাঠ সরিয়ে ফেলা হয়। স্থানীয়রা মনে করেন, কিছু অসাধু কর্মকর্তা এই চক্রের সঙ্গে জড়িত, যার ফলে অভিযান ব্যর্থ হয়।
রঘুনন্দন রেঞ্জের নতুন দায়িত্বপ্রাপ্ত বন কর্মকর্তা মোজাম্মেল হক বলেন, “আমি নতুন যোগ দিয়েছি। বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখছি। এসিল্যান্ড স্যারের সঙ্গে আলাপ হয়েছে, খুব শিগগিরই একযোগে অভিযান চালানো হবে।”
প্রয়োজন কঠোর ব্যবস্থা ও জনসচেতনতা
পরিস্থিতি মোকাবিলায় পরিবেশ রক্ষাকারী সংগঠন ও স্থানীয় সচেতন মহল বেশ কয়েকটি দাবিও তুলেছেন:
সকল অবৈধ স’মিলের তালিকা প্রকাশ ও তা বন্ধে দ্রুত অভিযান
প্রশাসন, বন বিভাগ ও পুলিশের সমন্বয়ে বিশেষ টাস্কফোর্স গঠন
বন পুনঃস্থাপনে বনায়ন কার্যক্রম জোরদার
স্থানীয় জনগণকে সম্পৃক্ত করে পরিবেশ সচেতনতা বৃদ্ধি
প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, অচিরেই অবৈধ স’মিলের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে এতদিনের নিষ্ক্রিয়তার পর প্রশ্ন থেকে যায়—এবারের অভিযান কি শুধু লোক দেখানো, নাকি সত্যিই কার্যকর কোনো পরিবর্তন আসবে?