চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের কমিশনার (চলতি দায়িত্ব) মো. জাকির হোসেনকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করেছে সরকার। নির্ধারিত কর্মদিবসে কর্মস্থলে অনুপস্থিত থেকে কাস্টমস কার্যক্রম বন্ধ রাখার অভিযোগে তাকে এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা প্রজ্ঞাপনে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়। এতে বলা হয়, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এবং এর অধীনস্থ দপ্তরগুলোর কার্যক্রম ২১ ও ২৮ জুন খোলা রাখার নির্দেশনার পরও জাকির হোসেন তা অমান্য করেন। ফলে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমে বিঘ্ন ঘটে এবং রাজস্ব আদায়ে বড় ধরনের ক্ষতি হয়।
স্বাধীনতার পর এই প্রথমবার দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রাজস্ব কেন্দ্র চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউস শনিবার এবং রবিবার বন্ধ ছিল। এটি দেশের মোট আমদানি-রপ্তানির ৯০ শতাংশের বেশি পরিচালনা করে থাকে। প্রতিদিন প্রায় ৩,০০০ থেকে ৪,৫০০ কনটেইনার আমদানি এবং ২,০০০ থেকে ৩,০০০ কনটেইনার রপ্তানি হয় এই বন্দরের মাধ্যমে। পণ্যের আর্থিক মূল্য গড়ে ১,৫০০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যায়, যা দেশের অর্থনীতিতে বড় প্রভাব ফেলে।
সরকারের মতে, কমিশনার জাকির হোসেন একক সিদ্ধান্তে ঢাকায় এনবিআর সংস্কার আন্দোলনে অংশ নিতে গিয়ে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের কার্যক্রম সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেন। এতে শুধু রাজস্ব আদায় নয়, সাধারণ ব্যবসা-বাণিজ্যেও নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। এজন্য তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে এবং সাত কর্মদিবসের মধ্যে লিখিত ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে। সরকারি চাকরি (শৃঙ্খলা) বিধিমালা, ২০১৮ এর ধারা ৩৯(১) অনুযায়ী এই বরখাস্তাদেশ জারি হয়।
সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে জানানো হয়েছে, এনবিআর সংস্কার আন্দোলনের নামে যেসব কর্মকর্তা সরকারবিরোধী কর্মসূচিতে ইন্ধন দিয়েছেন, তাদের বিরুদ্ধেও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ইতোমধ্যে একটি তালিকা তৈরি হয়েছে এবং দুর্নীতির অভিযোগ থাকা কর্মকর্তাদের বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) প্রয়োজনীয় আইনানুগ পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। কেউ যাতে দেশত্যাগ করতে না পারে, সে বিষয়েও সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
এই ঘটনায় প্রশাসনিক অঙ্গনে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, রাজস্ব সংস্থার অভ্যন্তরে এমন বিদ্রোহাত্মক পদক্ষেপ শুধু সরকারকেই নয়, দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতাকেও ঝুঁকির মুখে ফেলে। সরকারের শক্ত অবস্থান প্রমাণ করে, রাষ্ট্রীয় শৃঙ্খলা বজায় রাখতে কোনো ধরনের ছাড় দেওয়া হবে না।