মোঃ সাগর আহমেদ নবীগঞ্জ (হবিগঞ্জ) হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলায় এজাহারভুক্ত এক আসামিকে গ্রেপ্তার করতে গিয়ে পুলিশের ওপর সংঘবদ্ধ হামলা, সরকারি যানবাহন ভাঙচুর ও আসামি ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনার জেরে রবিবার (২৯ জুন) দুপুরে সেনাবাহিনী, র্যাব ও পুলিশের যৌথ চিরুনি অভিযানে ১৩ জনকে আটক করা হয়েছে।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, শনিবার (২৮ জুন) ভোররাতে নবীগঞ্জ উপজেলার গজনাইপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ গজনাইপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। নবীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মো. কামরুজ্জামানের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল ওই গ্রামের এজাহারভুক্ত আসামি নজর উদ্দিন (৪০) কে গ্রেপ্তার করতে গেলে স্থানীয় মসজিদে মাইকিং করে “ডাকাত এসেছে” বলে গুজব ছড়ানো হয়।
এরপর প্রায় দুই শতাধিক গ্রামবাসী দেশীয় অস্ত্রসহ সংঘবদ্ধ হয়ে পুলিশের ওপর হামলা চালায়। পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করা হয় এবং নজর উদ্দিনকে ছিনিয়ে নেওয়া হয়। এই হামলায় নবীগঞ্জ থানার তিন পুলিশ সদস্য— কনস্টেবল শাহ ইমরান (২৭), মোজাম্মেল হক (২৫) ও পল্টন চন্দ্র দাশ (২৫) আহত হন। আহত পুলিশ সদস্যদের নবীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
হামলার সময় দুর্বৃত্তরা পুলিশের একটি ভ্যানগাড়ি এবং দুটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা ভাঙচুর করে। ঘটনার খবর পেয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) আতিকুল হক ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
উল্লেখ্য, গত ৩১ মে নবীগঞ্জ উপজেলার জনতার বাজার পশুর হাট সরানোকে কেন্দ্র করে ইউএনও রুহুল আমিনের নেতৃত্বে পরিচালিত অভিযানে বাধা দেওয়ায় একটি মামলায় ৩৪ জনকে আসামি করা হয়। নজর উদ্দিন সেই মামলার অন্যতম আসামি ছিলেন।
এই ঘটনার পরদিন রবিবার ২৯ জুনন দুপুরে জনতার বাজার এলাকা ও আশপাশে সেনাবাহিনীর বানিয়াচং ক্যাম্প, র্যাব ও নবীগঞ্জ থানার পুলিশের সমন্বয়ে যৌথ চিরুনি অভিযান চালানো হয়। অভিযানে ১৩জনকে আটক করা হয়। যাচাই-বাছাই শেষে তাদের মধ্যে ৮ জনকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে।
আটককৃতরা হলেন হলেন, দক্ষিণ গজনাইপুর গ্রামের আব্বাস উদ্দিনের ছেলে ইকবাল হোসেন(৩১), পিরোজপুর গ্রামের নাজির মিয়ার ছেলে রোজেল মিয়া(২৫), দেওপাড়া গ্রামের সালেক মিয়ার ছেলে কাইয়ুম মিয়া(২২), রামলোহ গ্রামের জয়নাল মিয়ার ছেলে সোহেল আহমেদ(২৩),পানিউমদা গ্রামের মৃত তাজুল মিয়ার ছেলে আল আমিন(৬৬), শতক গ্রামের মৃত বশির মিয়ার ছেলে মো: সাদেক মিয়া(৪২), দেওপাড়া গ্রামের মৃত প্রদীপ দত্তের ছেলে পংকজ দত্ত(৪৩), রামলোহ গ্রামের মোহাম্মদ জুবেদ মিয়ার ছেলে আবির আহমেদ জয়(১৯)।
বানিয়াচং সেনা ক্যাম্পের সিনিয়র ওয়ারেন্ট অফিসার হারুনুর রশিদ জানান, অভিযানে সেনাবাহিনীর একটি দল র্যাব ও পুলিশকে সহায়তা করেছে। আটককৃতদের নবীগঞ্জ থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।
নবীগঞ্জ থানার ওসি শেখ মো. কামরুজ্জামান বলেন, আটকদের বিরুদ্ধে যাচাই-বাছাই চলছে। তদন্ত শেষে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
হবিগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার এ এন এম সাজেদুর রহমান বলেন, এজাহারভুক্ত আসামিকে গ্রেপ্তারের সময় পুলিশের ওপর সংঘবদ্ধ হামলার ঘটনা অত্যন্ত দুঃখজনক ও নিন্দনীয়। এতে আমাদের তিন সদস্য আহত হয়েছেন, সরকারি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে। ঘটনায় থানায় নিয়মিত মামলা হয়েছে এবং দোষীদের দ্রুত আইনের আওতায় আনতে অভিযান চলছে।