হবিগঞ্জ প্রতিনিধি:
সারা দেশে যখন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ঘিরে উত্তাল পরিস্থিতি, তখন হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জে ঘটেছে নতুন এক বিতর্কিত ঘটনা। ছাত্রলীগ থেকে পদত্যাগ করে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সক্রিয় কর্মী হিসেবে পরিচিত আবুল ফজলকে গ্রেফতার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ স্থানীয় রাজনৈতিক অঙ্গনে শুরু হয়েছে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা।
২০২৪ সালের ১৭ জুলাই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে শায়েস্তাগঞ্জ পৌর ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক পদ থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দেন আবুল ফজল। তার পোস্টে লেখা ছিল,
"যে দলের সাথে সম্পর্ক রাখলে মানুষ মা তুলে গালি দেয়, বাবার পরিচয় নিয়ে কথা তুলে, জন্ম নিয়ে কথা বলে — সেই দলের সাথে আর সম্পর্ক রাখতে চাই না।"
এই ঘোষণার পর থেকেই তিনি বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে যুক্ত হন এবং বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নেন। এমনকি গত বছরের ৪ আগস্ট শায়েস্তাগঞ্জে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের সংঘর্ষে তিনি প্রকাশ্যেই আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধাচরণ করেন।
তবে সেই আবুল ফজল এখন কারাগারে, তাও আবার ২২ জুনের আন্দোলনে হামলার ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায়। তাকে আটক করে সেনাবাহিনী এবং পরদিন পুলিশ তাকে গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠায়। অথচ মামলার বাদী শেখ হৃদয় জানাচ্ছেন, তিনি এমন গ্রেফতারের বিষয়ে কিছুই জানেন না।
বাদী শেখ হৃদয় বলেন,
"আমি প্রকৃত হামলাকারীদের শাস্তির দাবিতে মামলা করেছি। কিন্তু যারা আন্দোলনের পক্ষে ছিলেন, তাদের গ্রেফতার অত্যন্ত দুঃখজনক। আবুল ফজল আমার সহযোদ্ধা। তার গ্রেফতার সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। আমি এর তীব্র প্রতিবাদ জানাই।"
এদিকে, ফজলের মা তাসলিমা খাতুন দাবি করেছেন,
"আমার ছেলে অনেক আগেই ছাত্রলীগ ছেড়েছে। সে নিরপরাধ। তাকে অন্যায়ভাবে ফাঁসানো হয়েছে। আমি এর সঠিক বিচার চাই।"
শায়েস্তাগঞ্জ থানার ওসি দিলীপ কান্ত নাথ বলেন,
"সেনাবাহিনী তাকে আটক করে আমাদের কাছে হস্তান্তর করেছে। সে নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগের সাবেক নেতা ছিল। তার পদত্যাগের তথ্য তাৎক্ষণিকভাবে যাচাই করা সম্ভব হয়নি। বিষয়টি আমরা উর্ধতনদের জানিয়েছি, আশা করি সঠিক সিদ্ধান্ত আসবে।"
আন্দোলনপন্থী নেতারা বলছেন, এই গ্রেফতার বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের প্রতি রাষ্ট্রীয় দমন-পীড়নের আরেকটি উদাহরণ। তাদের দাবি, অবিলম্বে আবুল ফজলসহ সকল নির্দোষ গ্রেফতারকৃতদের মুক্তি দিতে হবে এবং হয়রানি বন্ধ করতে হবে।