চার দিনের যুক্তরাজ্য সফর শেষে দেশে ফিরেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। শনিবার (১৪ জুন) তার দেশে ফেরার দিনে প্রধান উপদেষ্টার সফরকে কেন্দ্র করে প্রেস সচিব শফিকুল আলম তার ভেরিফায়েড ফেসবুক প্রোফাইলে একটি বিবৃতি প্রকাশ করেন, যেখানে তিনি এই সফরের ৫টি উল্লেখযোগ্য অর্জনের কথা তুলে ধরেন।
১. ব্রিটিশ রাজপরিবারের স্বীকৃতি:
প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস ব্রিটেনের রাজা চার্লসের কাছ থেকে একটি মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কার গ্রহণ করেন। সেইসাথে রাজপরিবারের প্রধানের সঙ্গে ৩০ মিনিটব্যাপী একান্ত বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। প্রেস সচিবের ভাষায়, এটি বাংলাদেশে চলমান ‘জুলাই আন্দোলন’ ও সামগ্রিক রাজনৈতিক পরিবর্তনের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি হিসেবে দেখা হচ্ছে।
২. ঐতিহাসিক রাজনৈতিক সংলাপ:
যুক্তরাজ্যে অবস্থানকালে ড. ইউনূসের সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বৈঠক হয়। এই বৈঠককে প্রেস সচিব একটি ‘ঐতিহাসিক মুহূর্ত’ হিসেবে অভিহিত করেন। তিনি বলেন, এই সংলাপ অনেক ষড়যন্ত্রের ‘গেম ওভার’ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।
৩. দুর্নীতি বিরোধী কার্যক্রমে বড় অগ্রগতি:
যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সি (NCA) বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এক ঘনিষ্ঠ সহযোগীর প্রায় ১৭০ মিলিয়ন পাউন্ড মূল্যের সম্পদ জব্দ করেছে। এটি এনসিএর ইতিহাসে সবচেয়ে বড় সম্পদ জব্দের ঘটনা। এই পদক্ষেপকে দুর্নীতিবাজদের জন্য একটি শক্ত বার্তা এবং অধ্যাপক ইউনূসের নেতৃত্বে সম্পদ পুনরুদ্ধার প্রচেষ্টার উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হিসেবে দেখছেন সংশ্লিষ্টরা।
৪. আন্তর্জাতিক সহযোগিতা জোরদার:
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যানসহ দুই দেশের দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের মধ্যে একাধিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এসব বৈঠকের মূল উদ্দেশ্য ছিল জব্দকৃত সম্পদ ফেরত আনা এবং ভবিষ্যতে আরও ঘনিষ্ঠ সহযোগিতার ভিত্তি স্থাপন।
৫. রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে আশার আলো:
সফরকালে রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলের সঙ্গে উচ্চপর্যায়ের আলোচনা হয়। এতে সমস্যাটির সমাধান নিয়ে নতুন করে আশাবাদী হওয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে বলে জানানো হয়।
সফরের সার্বিক মূল্যায়নে প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, “এই অর্জনগুলো শুধু বাংলাদেশ নয়, আন্তর্জাতিক পর্যায়েও ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। এটি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আস্থা ও সহযোগিতা বৃদ্ধির একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।”
বিশ্লেষকদের মতে, ড. ইউনূসের এই সফর কেবল কূটনৈতিক অর্জনেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং দেশের রাজনৈতিক সমঝোতা, দুর্নীতি দমন এবং মানবিক সংকট নিরসনের পথে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে।