সিলেটের জাফলংয়ে সরকারি সফরে গিয়ে শ্রমিকদের বিক্ষোভের মুখে পড়েছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এবং বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান। শনিবার (১৩ জুন) দুপুরে পিয়াইন নদী পরিদর্শন শেষে ফেরার পথে স্থানীয় শ্রমিকরা তাদের গাড়িবহর আটকে প্রায় ১৫-২০ মিনিট ধরে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একাধিক ভিডিওতে দেখা গেছে, শ্রমিকরা সড়কে অবস্থান নিয়ে দুই উপদেষ্টার গাড়ির সামনে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। পরে পুলিশ হস্তক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে এবং উপদেষ্টাদের নিরাপদে হরিপুর গেস্ট হাউসে পৌঁছে দেওয়া হয়।
এ বিষয়ে গোয়াইনঘাট থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সরকার মো. তোফায়েল আহমেদ জানান, স্থানীয় শ্রমিকরা আকস্মিকভাবে রাস্তা আটকে বিক্ষোভ শুরু করে। তাৎক্ষণিক পুলিশ উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি সামাল দেয় এবং উপদেষ্টারা নিরাপদেই যাত্রা শেষ করেন।
পরিদর্শনকালে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, “জাফলং একটি পরিবেশগত সঙ্কটাপন্ন (ECA) এলাকা। এখানে কোনোভাবেই পরিবেশ ধ্বংস করে বালু বা পাথর উত্তোলন করার অনুমতি দেওয়া হবে না। পাথর কোয়ারি লিজ দেওয়ার পরিকল্পনাও নেই। বরং পর্যটন কেন্দ্রিক বিকল্প কর্মসংস্থান গড়ে তোলার উদ্যোগ নিতে হবে।”
অন্যদিকে উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেন, “অবৈধভাবে পাথর ও বালু উত্তোলনের ফলে এই এলাকা ভয়াবহভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এখানে থাকা সব ক্রাশার মেশিন অপসারণ করতে হবে এবং প্রয়োজনে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হবে।” তিনি আরও জানান, “পর্যটন উন্নয়নের মাধ্যমে এই অঞ্চল থেকে বৈদেশিক আয় বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে। আমাদের ঠিক করতে হবে, আমরা ধ্বংসের পথে যাব, নাকি পরিবেশ সংরক্ষণ করে মানুষের কর্মসংস্থানের পথ তৈরি করব।”
দুই উপদেষ্টার বক্তব্য ও অবস্থান থেকে স্পষ্ট, সরকার জাফলংসহ সিলেট অঞ্চলের পরিবেশ সংরক্ষনে কঠোর অবস্থানে রয়েছে। পাশাপাশি পর্যটন সম্ভাবনা কাজে লাগিয়ে বিকল্প কর্মসংস্থান তৈরির লক্ষ্যে একটি সমন্বিত পরিকল্পনার কথা জানানো হয়েছে।
এদিকে শ্রমিকদের আকস্মিক এই বিক্ষোভে এলাকায় উত্তেজনা তৈরি হলেও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর দ্রুত পদক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। পর্যবেক্ষকদের মতে, পরিবেশ রক্ষা বনাম জীবিকা—এই দ্বন্দ্বে একটি টেকসই সমাধানের পথ খুঁজে বের করাই এখন সময়ের দাবি।