লাখাই উপজেলা প্রতিনিধিঃ
লাখাইয়ের কৃষকরা বোরো ব্রি-২৯ জাতের বীজ কিনে প্রতরণার স্বীকার,তাদের দাবী, সুস্থ-সবল চারা এবং ভালো উৎপাদন পেতে হলে ভালো মানের বীজ ব্যবহার অত্যাবশকীয়। ভালো জাত ও বীজের মান ভালো না হলে কৃষকের অর্থ, শ্রম, সময় যেমন নষ্ট হয় তেমনি ঘাটতি সৃষ্টি হয় দেশীয় উৎপাদনের ওপরে।
কৃষক পর্যায়ে বীজের মান যাচাইয়ের ব্যবস্থা উন্নত না হওয়া, কৃষকদের সচেতনতার অভাব, বাজারে বীজের মনিটরিং ব্যবস্থার দুর্বলতা, নিকটস্থ দোকান থেকে বীজ ক্রয়, এমনকি বীজের সিন্ডিকেটের ফলে ভেজাল বীজ কিনে দিনের পর দিন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন কৃষকরা।
সম্প্রতি নামী দামী কোম্পানি এমনকি সরকারি বীজ উৎপাদন সংস্থা বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের (বিএডিসি) ভালো বীজ কিছু অসাধু ব্যবসায়ীরা মোড়ক পরিবর্তন করে বিক্রির ফলে কৃষকরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
কৃষকরা মোড়ক দেখে বীজ কিনে প্রতারিত হচ্ছেন।
জন্মালেও ফলন আসছে না। মোড়কে একটি জাত লেখা কিন্তু জন্মাচ্ছে অন্য জাত। কৃষকরা কেনো বীজ কিনে প্রতারিত হবেন? এগুলো দেখার দায়িত্ব যাদের তারা কী করেন? আর কৃষকরা অভিযোগ করেই কি লাভ?
ভালো বীজের সন্ধানে সব সময়ই ঘুরেন কৃষকরা।
বীজের মান বোঝা যায় তখনই যখন কৃষক কাঙ্খিত ফলন না পায়। অনেক সময় কৃষক বুঝতেও পারে না তার ব্যবহৃত বীজটি ভেজাল ছিলো কি না। কেন না এ সংক্রান্ত কোনো প্রকার প্রশ্ন তোলা হলে তার দিকে ছুড়ে দেওয়া হবে হাজারো প্রশ্নের তীর। কিভাবে জমি চাষ করেছিলেন, কখন সেচ দিয়েছিলেন, কী ধরনের সার দিয়েছিলেন, কতবার নিড়ানী দিয়েছিলেন, ক্ষেতে ঠিকমতো কীটনাশক দেওয়া হয়েছিলো কি না। এমন হাজারো প্রশ্ন এড়িয়ে চলতে কৃষক আর কোনো প্রকার অভিযোগ তুলতে সাহস পায় না। তার ওপরে রয়েছে বীজ ব্যবসায়ীদের বিশাল এক সিন্ডিকেট।
একদিকে যেমন বাজারে বীজের সংকট দেখিয়ে দফায় দফায় নীরবে দাম বৃদ্ধি পায়, অন্য দিকে সংকটে ভেজাল বীজ বিক্রি বেশি হয়।
এমনকি সরকারি বিএডিসির বীজ কিনেও কোন কোন সময় প্রতারিত হয় কৃষকরা। তবে সব বীজ ভেজাল তা কিন্তু নয়। কৃষি প্রণোদনার বীজে আস্থা রেখেও কর্মকর্তাদের গাফিলতিতে ভেজাল ও মেয়াদ উত্তীর্ণ বীজ নিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন কৃষকরা।এমনি এক ভুক্তভোগী ৫নং করাব ইউ পির মনতৈল গ্রামের কৃষক আরফুজ বলেন বুল্লাবাজারে অবস্থিত আজাদ ট্রেডার্স এর প্রোপাইটর হাফিজুর রহমান বোরো ব্রি-২৯ জাতের বীজ বলে আমাকে বীজ দেয়, আমি ৯ বিঘা জমিতে রোপন করে এখন দেখি এ গুলো ব্রি-২৯ নয়, সব ব্রি-২৮ জাতের।এ বছরের মত প্রতি বছরই এ দোকান থেকে বীজ কিনে প্রতারিত হচ্ছি।
আরেক ভুক্তভোগী সিংহগ্রামের কাশেম মিয়া বলেন,আজাদ ট্রেডার্স থেকে ভিত্তি বীজ কোম্পানির ব্রি ধান ২৯ বীজ সংগ্রহ করি। বীজের প্যাকেটে ব্রি-২৯ লিখা থাকলেও বীজ কিন্তু ব্রি-২৮, এ জাতের বীজে ভাল ফসল হয় না,আমার অনেক ক্ষতি হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আর একজন কৃষক জানান আমার ৫০ বিঘা জমিতে ২৯ বীজ কিনে এখন দেখি ২৮, এতে আমার অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
এখান থেকে বীজ সংগ্রহ করে আরও অনেক কৃষক প্রতারণার স্বীকার হয়েছেন।
অনেক কৃষক প্রতারিত হয়ে আইনের আশ্রয় নিবেন বলে জানা যায়। এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মাহমুদুল হাসান মিজান বলেন,বিষয়টা দুঃখ জনক,যদি কেউ ২৯ বলে ২৮ ধানের বীজ দিয়ে থাকে তাহলে অবশ্যই সেটা ঠিক হয়নি।আমি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সাথে আলোচনা করে বিষয়টা খতিয়ে দেখবো।