জুলাই-আগষ্টের পট-পরিবর্তনের পর আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন’কে সামনে রেখে নবীগঞ্জ-বাহুবল নিয়ে গঠিত হবিগঞ্জ-১ আসনে বিএনপি দলীয় মনোনয়ন ভাগিয়ে আনতে শুরু হয়েছে গুরু শিষ্যের লড়াই। দীর্ঘদিন ধরে তৃর্ণমুল পর্যায়ে নেতাকর্মীসহ সাধারণ মানুষের আস্থাভাজন হিসেবে পরিচিত সাবেক এমপি ও কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য গুরু আলহাজ্ব শেখ সুজাত মিয়া’র সাথে এবার দলীয় মনোনয়ন ভাগিয়ে আনতে প্রাণপন চেষ্টা করছেন শিষ্য সাবেক মেয়র ও পৌর বিএনপির সাবেক সভাপতি আলহাজ্ব ছাবির আহমদ চৌধুরী। বিষয়টি এখন নবীগঞ্জসহ ওই আসনের সর্বত্র টক অব দ্যা টাউন হয়ে দাড়িয়েছে রাজনৈতিক অঙ্গনে। এক সময়ে সাবেক এমপি গুরু শেখ সুজাত মিয়ার হাত ধরে কেন্দ্রীয় বিএনপির হেভিয়েট নেতাদের সান্নিধ্যে যাওয়া সাবেক মেয়র ছাবির আহমদ চৌধুরী দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে আলাদা বলয় তৈরী করে শেখ সুজাত মিয়াকে বেকায়দায় পালানোর চেষ্টা করছেন। নেতাকর্মী, সমর্থক ও সাধারণ ভোটারদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আকর্ষণ জাতীয় সংসদ সদস্য পদটি ঘিরে। সেই এমপি পদটি দখলে নিতে মরিয়া হয়ে এবার মাঠে চলছে গুরু ও তার শিষ্যের লড়াই। বিগত আওয়ামী সরকারের আমলে দীর্ঘদিন প্রবাসে থাকা গুরুর জনবিমুখ ও একই সাথে সুযোগ কাজে লাগিয়ে শিষ্যের জনমুখো হওয়া নিয়ে হিসেব কষছেন সাধারন জনগন। বিগত আওয়ামী সরকারের আমলে উভয়ের কর্মের আলোকে জনমুখো ও কর্মফলের কারণে তাদের এ লড়াইয়ে জনগনের মুখে মুখে রয়েছে বিকল্প প্রার্থীর নাম। কারণ আওয়ামী দুঃশাসনের সময় এই দু’জনই বিএনপির পক্ষে মাঠে সক্রিয় ছিলেন না। গুরু শেখ সুজাত মিয়া লন্ডনে এবং শিষ্য সাবেক মেয়র ছাবির আহমদ চৌধুরী আওয়ামী নেতাদের সাথে লিয়াজু করে বীরদর্পে মেয়র পদ আগলে রেখেছেন। তৎকালীন সময়ে উনার বিভিন্ন ব্যানার ফেষ্টুন বা বিল বোর্ডে দলীয় প্রধান বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া এবং ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান বা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ছবি ব্যবহার করতে দেখা যায়নি। এক্ষেত্রে সাবেক এমপি শেখ সুজাত প্রবাসে থাকলে দলীয় প্রধানদের ছবি সম্বোলিত পোষ্টার সাটিয়ে প্রচার চালিয়েছেন দু’ উপজেলায়। দলীয় সুত্রে জানাযায়, সাবেক এমপি শেখ সুজাত মিয়া বিএনপি রাজনীতিতে যোগদানের পর থেকে তৃর্ণমুল পর্যায়ে দল ঢেলে সাজিয়েছেন। নবীগঞ্জ-বাহুবলের এমন কোন গ্রাম নেই যেখানে সুজাত মিয়া যাননি বা তাকে চিননা এমন লোক আছে। সাধারণ মানুষের সুখে-দুখে পাশে থাকায় আলোচনার শীর্ষে আসে তার নাম। নারী-পুরুষ, যুবকসহ সকল শ্রেণী পেশার মানুষের মুখে মুখে শেখ সুজাতে ধ্বনি উচ্চরিত হয়ে উঠেছিল। তার পুরুস্কার হিসেবে আওয়ামী সরকারের আমলে উপ নির্বাচনে আওয়ামীলীগের হেভিয়েট প্রার্থী ডাঃ মুশফিক হোসেন চৌধুরীকে হারিয়ে এমপি নির্বাচিত হয়ে সারা বিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টি করেন। বর্তমানে নবীগঞ্জ উপজেলায় বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদলের একাধিক গ্রুপ রয়েছে। এরমধ্যে সাবেক এমপি শেখ সুজাত মিয়ার নেতৃত্বে একটি গ্রুপ। যেখানে রয়েছেন সাবেক মেয়র ছাবির আহমদ চৌধুরীসহ নেতাকর্মী। আমেরিকা সিকাগো বিএনপি সভাপতি শাহ মোজ্জাম্মেল নান্টু সমর্থিত বিএনপি বিশাল একটি অংশ। সিলেট বিভাগের দায়িত্বরত কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আলহাজ্ব জিকে গউছ সমর্থিত যুবদলসহ বিএনপির একটি অংশ। একাধিক গ্রুপিয়ের কারনে বিএনপি মাঠ শুন্য হয়ে পড়ে। জুলাই-আগষ্টের বিপ্লবের পর আবারও চাঙ্গা হওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে দলটি। ইতিমধ্যে সাবেক এমপি শেখ সুজাত মিয়া দেশে ফিরে মাঠে চষে বেড়াচ্ছেন। দলীয় নেতাকর্মীসহ সাধারণ মানুষের সাথে কুশল বিনিময় করছেন। আমেরিকা থেকে দেশে আসেন শাহ মোজ্জাম্মেল আলী নান্টু। তিনি উনার বাড়ীতে পারিবারিক অনুষ্টান রাজৈনিতক অনুষ্টান সভা সমাবেশের মাধ্যমে কেন্দ্রীয়, জেলা ও উপজেলাসহ তৃর্ণমুল পর্যায়ে নেতাকর্মীদের উপস্থিতি ঘটিয়ে নাড়া দিয়েছেন। লন্ডন থেকে তালহা চৌধুরী স্বল্প দিনের জন্য এসেই নেমে পড়েন মাঠে। দলীয় ৩১ দফার লিফলেট নিয়ে হাটে, মাঠে ঘরে ঘরে পৌছে দিয়ে আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন। জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে শুরু হয়েছে দেয়াল লিখন, গেইট র্নিমাণ, ব্যানার, পোষ্টার ও লিফলেট বিতরণ। সাবেক এমপি যখন দেয়াল লিখন ও গেইট নির্মাণ শুরু করেন, টিক তখনই ভিন্ন রূপে দেয়াল লিখন ও গেইট নির্মাণ করে প্রচারনায় নামেন সাবেক মেয়র ছাবির আহমদ চৌধুরী। একই ঘরোয়ার দু শীর্ষ নেতার এমন প্রচারনায় রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনার নতুন মোড় নেয়। শিষ্য সাবেক মেয়র ছাবির আহমদ চৌধুরীর এমন প্রচারনায় সোস্যাল মিডিয়ায় নানা ভাবে লেখালেখি ভাইরাল হচ্ছে। অনেকেই মন্তব্য করেছেন দল ক্ষমতায় আসার আগেই উনার বালু মহাল বানিজ্য, হাট বাজার ইজারা, টেন্ডারবাজিসহ দীর্ঘ ১৭ বছরের মধ্যে দলীয় প্রধানদের ছবি ব্যতিত বিল বোর্ড, ব্যানার ও পোষ্টার লাগিয়ে ঈদ শুভেচ্ছাসহ বিভিন্ন কার্যক্রমের। তাও ছিল পৌর সভার সীমানার মধ্যে। কিন্তু এবার দলীয় প্রধানদের ছবি ব্যবহার করে নবীগঞ্জ-বাহুবল এলাকায় প্রচারনা চালানো হচ্ছে। যদিও তৃর্ণমুল পর্যায়ে উনার অবস্থা এতো টুকু মজবুত নয়, তবুও থেমে নেই প্রচারনা। সাধারণ নেতাকর্মীদের অভিমত যত গ্রæপিং, লবিং হউক না কেন এই আসনে শেখ সুজাত মিয়ার বিকল্প নেই। কারণ নবীগঞ্জ-বাহুবল নির্বাচনীয় এলাকায় এমন কোন গ্রাম নেই যেখানে নারী-পুরুষ, আবাল বৃদ্ধ শেখ সুজাত মিয়াকে ছিনেন না। তৃর্ণমুল পর্যায়ে শেখ সুজাতের নাম দলীয় নেতাকর্মীসহ সাধারণ মানুষের মুখে মুখে। এর বাহিরে চিন্তা করলে এই আসনটি হাত ছাড়া হতে পারে বিএনপির। তবে গুরু শিষ্যের মনোনয়ন লড়াইয়ে তৃতীয় পক্ষ সুযোগ নিতে পারে বলেও ধারনা ত্যাগী নেতাকর্মীদের। এছাড়া ওই আসনে মনোনয়ন দৌড়ে আলোচনায় রয়েছেন আমেরিকা সিকাগো সভাপতি শাহ মোজ্জাম্মেল আলী নান্টু। ইতিমধ্যে কেন্দ্রীয় বিএনপি হবিগঞ্জ সদর আসনে প্রার্থীতা ঘোষনা দিলেও বাকী ৩টি আসনে এখন কোন সিদ্ধান্ত জানা যায়নি। শেষ পর্যন্ত নবীগঞ্জ-বাহুবল আসনে কে পাবেন দলীয় মনোনয়ন তা কেন্দ্রীয় কমিটি বা দলের পার্লামেন্ট বোর্ডই বলতে পারবেন। তবে ওই আসনে গুরু শিষ্যের মনোনয়ন প্রত্যাশায় রাজনৈতিক অঙ্গনে টক অব দ্যা টাউনে পরিনত হয়েছে।