স্বাধীনতা একটা ক্ষুদ্র পিপীলিকা থেকে মানুষ পযৃন্ত সবার জন্মগত অধিকার। প্রাণী মাত্রই স্বাধীনতাকামী। মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব। তাই তার জন্য স্বাধীনতা-প্রীতি অতি স্বাভাবিক ও চিরন্তন। সৃষ্টির পর থেকেই ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, স্বাধীনতা মানুষের নিকট তার জীবনের চেয়ে অনেক মূল্যবান।
প্রাচীন গ্রীসে প্রেট্রিশিয়ানদের নিকট থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য প্লেবিয়ানরা জীবনের তেয়াক্কা না করে জঙ্গলে চলে যায়। শেষ পর্যন্ত তারা অনেক ত্যাগ-তিতিক্ষার বিনিময়ে তাদের ইপ্সিত লক্ষ্যে পৌছঁতে সক্ষম হয়। স্বাধীনতা-প্রীত কবি নজরুল ইসলাম তাঁর রচিত কামাল পাশা নামক কবিতায় লিখেছেন,বেহেশ্ত্ও না চাই,মোরা বেহেশ্ত্ও না চাই কিন্ত মাঝে মধ্যে আমাদের চিন্তার ভুল এটাই হয় যে, আমরা ভৌগলিক স্বাধীনতাকেই স্বাধীনতা বুঝি। এ ধারণাটি সম্পূর্ণ ভুল ভৌগলিক স্বাধীনতা একটি অংশ মাত্র। এটা পূর্ণ স্বাধীনতা নয়। স্বাধীনতা বলতে বুঝায় ভৌগলিক, ধর্মীয়, অর্থনৈতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক ইত্যাদির সমন্বয়। এজন্য, কোন সময়ে নির্দিষ্ট পদক্ষেপের মাধ্যমে কোন একজনের দ্বারা সেটা অর্জন করা সম্ভব নয়। এজন্য চাই একটা জাতির চলমান উন্নত প্রচেষ্টা। কোন একটা ক্ষুদ্র ছিদ্র পথেও যেন সামান্য ক্ষতিও প্রবেশ করতে না পারে এজন্য সর্বদা সকলকে সজাগ থাকতে হবে। প্রয়োজনে প্রাণ করার মনোভাব রেখেই সেটা সম্ভব।
আমাদের বাংলাদেশে যেভাবে আমরা ২৬ শে মার্চকে স্বাধীনতা দিবস হিসেবে স্মরণ করে আবার এক বছর ঘুমিয়ে পড়ি এতে আমাদের স্বদেশ প্রীতির কোন পরিচয় মিলে না। বরং জাতির প্রকৃত স্বাধীনতা অর্জনের জন্য ১৯৭১ সালে মুক্তিযোদ্ধাসহ দেশে প্রকৃত গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার স্বার্থে যারা আত্ম-নিবেদিত হয়েছেন-শহীদ হয়েছেন তাঁরাই প্রকৃত দেশ প্রেমিক। তাঁদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে তাঁদের প্রদাঙ্ক অনুসরণে চলাই জাতির প্রকৃত কর্তব্য। স্বাধীনতা রক্ষার জন্য আমাদের থাকতে হবে দৈনন্দিন কর্ম প্রচেষ্টা ও মন-মানসিকতা। স্বাধীন মন-মানসিকতা নিয়ে নির্মল জীবন গড়ার স্বার্থে জীবনকে তুচ্ছ ভেবে জাতীয় জীবনকে স্বার্থক করে গড়ে তোলার প্রচেষ্টাতেই স্বাধীনতা বীজ নিহিত। দেশ ও জাতির স্বার্থে জীবনে সুন্দরভাবে গড়ে তোলার জন্য প্রতিটি নাগরিককে ভাবতে হবে যে, আমিও জাতির একজন সদস্য, সে হিসেবে আমাকেও সুন্দর হয়ে বড় হতে হবে।
দেশকে উপহার দিতে হবে একজন সুনাগরিক। যদি একটি জাতির প্রতিটি সদস্য নিজ উদ্যোগ ও তৎপরতায় কর্তব্যনিষ্ঠ হয়ে পড়েন এবং প্রত্যেকে নিজ নিজ ক্ষেত্রে দায়িত্বশীল মনে করে তবেই একটা দেশ ও জাতি সর্বঙ্গ সুন্দর হয়ে উঠবে। এভাবে প্রত্যাশা করা যায় একটি সুন্দর জাতি ও স্বাধীনতার প্রকৃত রূপ।